• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপির ‘এক দফা’ আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৩  

             
বিএনপির ‘এক দফা’ আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ। রাজপথেই মোকাবিলা করবে তাদের এক দফার আন্দোলন। ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী মহল মনে করেন, বিএনপির এক দফা ‘আষাঢ়ের গর্জন’। সরকার পতনের শক্তি বিএনপির নেই। তাদের আন্দোলনে দেশের জনগণের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। এর আগেও তারা অনেকবার এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু জনগণ সাড়া দেয়নি। এবারও দেবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি গত সাড়ে চৌদ্দ বছর ধরে এক দফা আন্দোলন করছে। আসলে তাদের দফাটা কী? জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়। তারা গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে ‘খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে-সরকারের পতন ঘটাবে’ এমন ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল পায়নি। শেষ পর্যন্ত গরুর হাটে গিয়ে জনসভা করে ফিরে যেতে হয়েছিল। এবারও  এক দফা ঘোষণা দিয়েছে। খুনিদের রক্ষা করার দফার সঙ্গে দেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের শান্তি, স্থিতিশীল পরিবেশ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে থাকব। কেউ অশান্তি-সন্ত্রাস নৈরাজ্য করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।’ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ আওয়ামী লীগই একমাত্র জনগণের সংগঠন। আন্দোলন কত প্রকার, কী কী তা জানে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু জনগণের সাড়া নেই। সে কারণে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য-বিএনপি যখন যেখানে আন্দোলন করবে, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে সেখানে তারাও থাকবেন। বিএনপিকে আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালানোর সুযোগ দেওয়া হবে না।

বিএনপির ১২ জুলাইয়ের সমাবেশকে আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে- এমন প্রশ্নের জবাবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি নেতারা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়, কিন্তু সমাপ্তি টানেন না। আবার রাজপথেও দেখা যায় না। আন্দোলন প্রত্যাহার না করেই ঘরে চলে যায়। এবারের আন্দোলনও তাই হবে, ব্যতিক্রম কিছু হবে না।’ তিনি বলেন, আমাদের দেখার অভিজ্ঞতা তো অনেক। এই ১২ তারিখ তো প্রথম তারিখ না। এর আগেও বহু তারিখ আমাদের শুনতে হয়েছে, আমাদের দেখতে হয়েছে। আসলে জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকলে কোনো আন্দোলনই সফল হয় না। এখনো মনে করি, তারা যে ইস্যুতে এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে, তার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং এটা নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন বা উৎকণ্ঠিত নই।’

জানা গেছে, আগামীকাল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে জাতীয় নেতারাসহ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা বক্তৃতা করবেন। এদিন শক্তি দেখাতে মরিয়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের পদপ্রত্যাশী নেতারাও। কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে উপস্থিত হবেন শান্তি সমাবেশে। এই শান্তি সমাবেশ সফল করতে গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বর্ধিত সভা করেছে। আজ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করবে। একইভাবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ অন্যরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই সন্ত্রাস-নৈরাজ্য। আমরা রাজপথে কাউকে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করার সুযোগ দেব না। ভোটের আগে বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা কর্মসূচি দেয়। বিগত সময়ে তারা নির্বাচন ঠেকানোর নামে কর্মসূচি দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আমরা এবার সেই সুযোগ দেব না। যেখানেই সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সেখানেই প্রতিহত।’

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বরাবরই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকেই সামনে রাখা হয়। সহযোগী সংগঠনগুলোর সূত্র বলছে, ‘রাজপথের নিয়ন্ত্রণ যার, রাজনীতি ও ভোটের নিয়ন্ত্রণ তার’ এমনটাই তারা মনে করে। এবার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সামনে থাকবে। পরে প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ভূমিকা পালন করবে। রাজপথে বিএনপির আন্দোলনের প্রতিটির পাল্টা কর্মসূচি দেবে আওয়ামী লীগ। গত ডিসেম্বর থেকে এভাবে পাল্টাপাল্টি করে দলের পক্ষে ইতিবাচক ফল পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে তা অব্যাহত রাখা হবে। এভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। তখন আর আন্দোলন জমবে না। ইতোমধ্যে যুবলীগ ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, দেশের জনগণই এ আন্দোলনকে প্রত্যাখ্যান করবে, প্রতিহত করবে। দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। কাজেই সন্ত্রাসী দল কি কর্মসূচি ঘোষণা দিল? সেটা নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমরা বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি, সেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। আগামী ১২ জুন রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করব।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –