• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

পঞ্চগড়ে ইউএনও মিনি লাইব্রেরি থেকে দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটির

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

জ্ঞানহীনতার আঁধার দূর করে আলোকিত করে তোলে বই। গড়ে তোলে জ্ঞানী ও আলোকিত মানুষ। এমন সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার প্রাক্তন ইউএনও মো. মুসফিকুল আলম হালিম আটোয়ারীতে দায়িত্ব পালনকালীন অফিসটিই বানিয়েছিলেন মিনি লাইব্রেরি। সেই মিনি লাইব্রেরিটি এখন দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটির হিসেবে পূর্ণতায় রূপ নিয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান আটোয়ারী পরিদর্শনে এসে উদ্ভাবনী কার্যক্রম হিসেবে নবনির্মিত এই গ্রন্থকুটির পরিদর্শন করেছেন। পরিষদের অভ্যন্তরে সিরামিক ইটের তৈরি একতলা ভবনে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটিরটি দেখে মুগ্ধ হয়ে উন্নয়ন কাজের জন্য এক লাখ ৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন- পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম, বর্তমান নির্বাহী অফিসার রাসেদুল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শায়লা সাঈদ তন্বীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর আটোয়ারী উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন মুসফিকুল আলম হালিম। চলতি সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদলিজনিত কারণে বদলি হন তিনি। এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ মাদকাসক্ত পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে পাঠাভ্যাসের দিকে ফিরিয়ে আনতে কয়েক শতাধিক বই দিয়ে নিজ অফিস কক্ষে বানান মিনি লাইব্রেরি। সরকারিভাবে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আত্ম-উন্নয়নমূলক বই ক্রয় করা হয়।

শিক্ষার্থীরা সাধারণত প্রতি মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ ও ফেরত দিতে আসতো। তারা প্রতিনিয়ত বই বাসায় নিয়ে পড়া শেষে জমা দিয়ে আবার নতুন বই নিয়ে পড়তে থাকে। বই পড়া শেষে অংশ নেয় বুক রিভিউতে। যারা ১৫টি বই পড়ে শেষ করে তাদেরকে দেওয়া হতো পুরস্কার। কেউ কেউ ৫০টির অধিক বই পড়েছে। এ লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মুশফিকা রেজা, প্রীতিলতা, সাদিয়া ইসলাম প্রজ্ঞা, নুসরাত জাহান ঐশ্বী, মাফি, নদী, ঝিনুক রানী, মাম্পি, বিন্দু রানীসহ শতশত শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী আলিফ আল হুমায়রা অনু ও ঝিনুক রানী জানান, ইউএনও মুসফিকুল আলম হালিম স্যারের গড়া মিনি লাইব্রেরি এখন দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটিরে রূপ নিয়েছে। এতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। আমরা হুমায়ুন আহমেদ, জাহানারা ইমামসহ অনেক লেখকের বই পড়ে বুক রিভিউ দিয়েছি। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অনেক কিছুই জেনেছি। আর ইউএনও স্যার বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি আমাদেরকে ভবিষ্যত জীবন গড়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে লাইব্রেরির পাশাপাশি প্রাক্তন ইউএনও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া প্রায় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা করেছেন। সরকারি কলেজে চান্স পাওয়া বেশ কিছু শিক্ষার্থীর মাসিক খরচ বহন করে এগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা কলেজের শামীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিমা, পঞ্চগড় মহিলা কলেজের ইশা মনি, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপন, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লিমন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদিয়া, দয়াল বর্মনসহ আরও অনেকে। এছাড়াও একজন তালাকপ্রাপ্ত নারীর নার্সিং ইন্সটিটিউটে চান্স পাওয়ায় আর্থিক সহযোগিতা করে লেখাপড়ায় এগিয়ে দিয়েছেন এই ইউএনও।

এছাড়াও ইতিহাস-ঐতিহ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ, প্রায় ৭০ বিঘা সরকারি খাস জমি উদ্ধার, ৭১ আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আশ্রয়ন প্রকল্পে ‘মসজিদুত তাকওয়া মসজিদ, মসজিদে হানজালাসহ বিভিন্ন মসজিদ ঘর নির্মাণ, ফুটবল একাডেমি, শিশু পার্ক, স্মার্ট ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ‘সবুজ বিন' স্থাপন, সাইট্রাস উদ্ভিদের বাগান তৈরি, বীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, ডায়াবেটিস হাসপাতাল উন্নয়ন, ৩৩ টি জলমহাল সংস্কারের মাধ্যমে সায়রাতভুক্ত করে ইজারা দেওয়া, কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে ‘পাখির অভয়াশ্রম’এর কাজের বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি।

নাজমা বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, মিনি লাইব্রেরি থেকে গ্রন্থকুটির উদ্যোগটি ছিল প্রাক্তন ইউএনও মুসফিকুল আলম হালিম স্যারের। এটাতে অনেক উপকৃত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমার মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী, সে পাঠাগারের পাঠক। সেখানে বই পড়ে তার মেধা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হচ্ছে। এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ধন্যবাদ জানাই।

অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক রমজান আলী বলেন, গ্রন্থকুটিরটি আমাদের এলাকার জন্য যুগান্তরকারী উদ্যোগ ছিল। এখানে এখন শতশত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে উপকৃত হচ্ছে। তারা বইয়ের নেশায় থাকায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের আসক্তি থেকে অনেকটা দূরে থাকছে। গ্রন্থকুটির নির্মাণ করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই কথা বলেন ফকিরগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজা আল মামুন।

মুসফিকুল আলম হালিম বর্তমান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও মাদক থেকে দূরে রাখার জন্যই উপজেলায় স্থাপন করা হয় এই গ্রন্থকুটির। ইউএনও মিনি লাইব্রেরি থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে জ্ঞানের মশাল তাদের হাতে দেওয়া হয়েছে। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে এরাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। তারা যেন দুর্নীতিমুক্ত থাকে, তারা যেন আত্মবিশ্বাসী থাকে, তারা যেন তাদের স্বপ্নকে ছুঁতে পারে, তারা যেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ও বুকে অদম্য সাহস নিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে এটাই প্রত্যাশা।

আটোয়ারী উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইউএনও মুসফিকুল আলম হালিম এ উপজেলায় যোগদানের পর অনেক ভালো ও উদ্ভাবনী কাজ করেছেন। তার মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে নিজ উদ্যোগে মিনি লাইব্রেরি, পরবর্তীতে একটি দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থকুটির নির্মাণের কাজও হয়েছে তার উদ্যোগেই। তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন ও মানুষ প্রকৃত সেবা পেয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –