• সোমবার ১৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৯ ১৪৩১

  • || ০৪ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে মরে যাচ্ছে চা বাগান 

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২৪  

সারাদেশের মতো উত্তরের জেলা পঞ্চগড়েও তীব্র তাপদাহ বিরাজ করছে। জেলায় প্রায় ৮ মাস ধরে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষিতে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চলমান তাপদাহে মাটি শুকিয়ে মরে যাচ্ছে চা বাগান। এদিকে কাঁচা চা পাতার মূল্য কমে যাওয়ায় লোকশানের আশঙ্কায় চা বাগানে সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছে চাষিরা। চাষিরা বলছেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

শুধু পঞ্চগড় নয়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও তীব্র তাপদাহ আর কাঁচা চা পাতার মূল্য নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উত্তরের পাঁচ জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিরা। তারা বলছেন, অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিতে হচ্ছে বেশি। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরতাপে মাটি শুকিয়ে লাল হয়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৭ মাস ধরে এই জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। চাষিরা বলছেন, গত বছরের ভাদ্র মাসে শেষ বৃষ্টি হয়েছিল। তারপর আর বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে পানির স্তর নেমে গেছে অনেক নিচে। সেচের পানি জমিগুলো ধরে রাখতে পারছে না। এজন্য সেচ বেশি দিতে হয়। খরচ বেড়ে গেছে। অনেক ক্ষুদ্র চাষি টাকার অভাবে বাগানে সেচ দিয়ে পানি দিতে পারছে না।

তেঁতুলিয়া উপজেলার কালান্দিগজ এলাকার চা চাষি মিজানুর রহমান জানান, ৪৫ দিন পর পর কাঁচা চা পাতা তোলা হয়। এই ৪৫ দিনে আগে দুই থেকে তিনবার সেচ দিয়ে পানি দিতে হতো। কিন্তু খরার কারণে এ বছর ৪৫ দিনে পানি দিতে হচ্ছে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার। প্রতি একর চা বাগানে পানি দিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।

আজিজ নগর এলাকার চা চাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, অনাবৃষ্টির জন্য এক একর জমি থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা পাওয়া যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা কেনে মাত্র ১০ টাকা দরে। এক একর জমি থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা পাই। সেচ খরচ, সার কীটনাশক, মজুরিসহ এক একর জমিতে খরচ পরে ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে চা বাগানের যত্ন নিতে পারছি না। চা বাগান মরে যাচ্ছে। সরকার আমাদের দিকে না তাকালে, মাঠে মারা যাব আমরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দীর্ঘ ৮ মাস ধরে পঞ্চগড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তবে এই জেলায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমির হোসেন জানান, কাঁচা চা পাতার দাম কমে যাওয়ার কারণে অনেক চাষি চা বাগানে সেচ দিচ্ছে না। তারা লোকশানের আশঙ্কা করছেন।

পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লামনিরহাট ও দিনাজপুর) বর্তমানে নিবন্ধিত ৯টি ও অনিবন্ধিত ২১টি বড় চা-বাগান (২৫ একরের ওপরে) রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৫৩টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ৩০২টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তনের চা-বাগান আছে। বাড়ির আনাচে-কানাচে ক্ষুদ্র চাষিরা চা বাগান গড়ে তুলেছেন।

সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। গত মৌসুমে পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। চা চাষের জন্য ২৮ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সবচেয়ে সহনীয়। বর্তমানে এই এলাকায় এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –