• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

সর্বশেষ:
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ই আইন হিসেবে গণ্য হবে: জনপ্রশাসনমন্ত্রী। ২৫ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসির সব পরীক্ষা স্থগিত।

অর্থনীতি সচল রাখতে টিকায় গুরুত্ক দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা 

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২১  

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার ঘোষণা দেয় সরকার। করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় গত বছর টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জরুরী সেবা, কাঁচাবাজার, নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকুচিত হওয়ায় চাপের মুখে পড়ে অর্থনীতি। এরপর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার জোগান দেয় সরকার। সরকারী ও বেসরকারী খাতের নানা প্রচেষ্টায় অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ। এ সংক্রমণ ঠেকাতে গত এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে তিন দফায় ২৪ দিনই দেশ ছিল কঠোর বিধিনিষেধের জালে। বর্তমানে দেশব্যাপী চলছে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এতে সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী অফিস বন্ধ আছে। এছাড়া সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। বন্ধ আছে শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে চালু আছে পুঁজিবাজার, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। চলমান লকডাউনে জরুরী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা বাদে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। এতে ঈদের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ ১৮-২০ দিনের জন্য বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় উদ্বেগ তৈরি হয় রফতানিমুখী শিল্প মালিকদের মধ্যে। এতে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, পণ্য বিমানে পাঠানোর মতো আর্থিক লোকসানের বিষয় তুলে এ নিয়ে শুরু থেকেই সরকারের কাছে কারখানা খুলে দেয়ার প্রস্তাব দেন পোশাক শিল্প মালিকরা। এর মধ্যে ঈদ উদযাপন করতে দলে দলে বাড়ি যান শ্রমিকরা।

শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, কেবল পোশাক খাতের শ্রমিকই ঢাকা ছেড়েছে ২০ লাখের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা হুট করেই গত শুক্রবার রফতানিমুখী পোশাক কারখানা ১ আগস্ট থেকে চালু হবে বলে ঘোষণা আসে। শনিবার ভোর থেকেই ভোগান্তি সঙ্গে করেই পোশাক খাতসহ অন্য শিল্পের শ্রমিকরা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, অটোরিক্সা, রিক্সা আর হেঁটেই কর্মস্থলের পথে রওনা দেন।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন কারখানার সংখ্যা সাত হাজার ৪৯১টি, যেখানে শ্রমিক সংখ্যা ৩৯ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের কারখানার সংখ্যা তিন হাজার ৪৪৫টি। এর বাইরে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত ৩৯৯টি কারখানাও রয়েছে, যারা রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে অন্যান্য খাতের রফতানিমুখী কারখানার সংখ্যা শিল্পাঞ্চল পুলিশের হিসাবে আলাদাভাবে দেয়া নেই। শিল্পাঞ্চল পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব কারখানাই চালু হয়েছে। এছাড়া লকডাউনের আওতা বহির্ভূত অন্যান্য কারখানাও চালু ছিল।’

এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কারখানা খোলার প্রথম দিন ৮৫-৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘কারখানাগুলোতে ৮০-৯০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিত ছিল। কোন কোন কারখানায় ৯৫ শতাংশ শ্রমিকও উপস্থিত ছিল বলে জানান তিনি। আশা করছি, ‘৫ তারিখের পর লকডাউন শিথিল হলে পুরোদমে কাজ শুরু করা যাবে।’

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর সাধারণ ছুটি এবং লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি বন্ধ থাকায় দীর্ঘ হচ্ছে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ।

গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলালউদ্দিন বলেন, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৭০ দিন দোকানপাট বন্ধ ছিল। আর সব মিলিয়ে গত দেড় বছরে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৭০ কোটি টাকা।

সমিতির তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ৫৫ লাখ ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন। এ খাতে কর্মচারী আছেন দুই কোটির বেশি। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি এই খাতসংশ্লিষ্ট অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এজন্য আগামী ৫ আগস্টের পর দোকান খোলার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

এদিকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেস্তরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান করোনা মহামারীতে দোকান বন্ধ রাখায় আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চলমান লকডাউনে ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সারাদেশে ৬০ হাজার রেস্তরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। করোনায় সারাদেশে ৮০ ভাগ রেস্তঁরা বন্ধ রয়েছে।

টিকায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে ৪০ লাখ পোশাককর্মী ॥ গত এক দশকে বাংলাদেশের রফতানি আয় বেড়েছে ৮০ শতাংশ। এর নেপথ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। অথচ শুরুতে করোনার টিকাদানে অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিল না এ খাতের কর্মীরা। তবে এখন তাদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ খাতের ৪০ লাখ কর্মী টিকায় অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।

অন্য শিল্পকারখানার কর্মীদেরও টিকার আওতায় আনার দাবি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্যানুযায়ী, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় মোট শ্রমিকের সংখ্যা ছয় কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে সরাসরি কর্মসংস্থানে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ছয় কোটি ৮০ হাজার। তাদের এক কোটি ২৫ লাখ শ্রমিক শিল্প খাতে কাজ করছেন। পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর নেতাদের দাবির মুখে এ খাতের ৪০ লাখ শ্রমিক টিকা পেলেও অন্য রফতানি ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বিষয়ে নিশ্চয়তা মেলেনি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –