• শুক্রবার ১১ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

  • || ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

২২তম তারাবিতে যা পড়া হবে   

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২৪  

পবিত্র রমজানের ২১তম দিন শেষ হলো আজ। রাতে এশার নামাজের পর পড়া হবে ২২তম তারাবি। রমজান মাসের অন্যতম আমল হলো কোরআনুল কারিম খতমের মাধ্যমে তারাবি নামাজ আদায়। ইসলামি ফাউন্ডেশন নির্ধারিত ২২তম তারাবিতে দেশের প্রায় সব মসজিদে আজ পড়া হবে সুরা হামিম সিজদা ৪৭ আয়াত থেকে সুরা জাসিয়া ৩৭ আয়াত পর্যন্ত। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২৫তম পারা।

চলুন একনজরে দেখে নিই- আজকের খতম তারাবিতে কী তেলাওয়াত করা হবে।

সুরা হা–মিম সিজদা, আয়াত ৪৭-৫৪
কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তারপর মানুষের সুখের ও দুঃখের সময় কী অবস্থা হয় সে বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দুঃখের সময় মানুষ আল্লাহমুখী হয়, দোয়া কান্নাকাটি করে। আর সুখের সময় আল্লহকে ভুলে যায়। এরপর বলা হয়েছে, যারা কোরআনুল কারিমকে প্রত্যাখ্যান করে তারা বিভ্রান্ত। পরকালের ব্যাপারে যারা সন্দেহপোষণ করে তাদের উল্লেখ করার পর বলা হয়েছে- নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।

সুরা শুরা, আয়াত ১-১৯
আল্লাহ তাআলা রাসুল (স.)-কে সম্বোধন করে বলছেন, ‘তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে আল্লাহ তাআলা অহি প্রেরণ করেন, যিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ সুতরাং অহির উৎপত্তিস্থল একটাই, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার কাছে এক আল্লাহই অহি পাঠিয়েছেন। তারপর আল্লাহ তাআলার কুদরতের কথা বর্ণনা করার পর পুনরায় অহির আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা আল্লাহ। তিনি মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। মানুষের বংশবৃদ্ধিও তাঁর কুদরতে হয়। আল্লাহ মানুষের জীবন যাপনের জন্য যে সংবিধান দিয়েছেন তা আঁকড়ে ধরা। এরপর বলা হয়েছে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। আর তিনি মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।

সুরা শুরা, আয়াত ২০-৪৩
বলা হয়েছে যারা আখেরাতের ফল চায় আল্লাহ তাদের জন্য আখেরাত বরাদ্দ করেন; আর যারা দুনিয়ার ফল চায় আল্লাহ তাকে তাই দেন; আখেরাতে তার কিছু থাকে না। এরপর বলা হয়েছে, তিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আরও বলা হয়েছে, নেক আমলকারী মুমিনের ডাকে আল্লাহ সাড়া দেন, তাদের অনুগ্রহ করেন। মানুষের দুনিয়াতে যে অবস্থা আসে তা তার কর্মের ফল। বলা হয়েছে, দুনিয়ার সবকিছু সাময়িক ভোগ্যসামগ্রী মাত্র, আল্লাহর কাছেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। এরপর মানুষের ওপর জুলুমকারী ও জমিনে বিদ্রোহাচরণকারীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়েছে।

সুরা শুরা, আয়াত ৪৪-৫৩
বলা হয়েছে, কন্যা বা পুত্র সন্তান দেওয়া অথবা সন্তান একেবারেই না দেওয়া সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর এখতিয়ারাধীন। মানুষের এতে কোনো হাত নেই। আল্লাহ যা দেন তাই মেনে নেওয়া মুমিনের কর্তব্য। বলা হয়েছে, সেদিন আসার আগেই আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও, যে দিনকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। সেদিন কোনো আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং প্রতিরোধকারীও থাকবে না।

সুরা জুখরুফ, আয়াত ১-২৫
বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ কোরআন নাজিল করেছেন। মানুষের জন্য আল্লাহ নেয়ামত স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আদর্শ-বিমুখ জাতির পরিণতির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর কিছু নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে। তারপর জাহেলি যুগের কিছু ঘৃণ্য প্রথার সমালোচনা করা হয়েছে। যেমন কন্যাসন্তান হলে পিতার মুখ কালো হয়ে যাওয়া ও জ্যান্ত পুঁতে ফেলা ইত্যাদি।

সুরা জুখরুফ, আয়াত ২৬-৪৫
আল্লাহর একত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। সবাই যদি আল্লাহকে মেনে নিতো তাহলে তিনি সবাইকে প্রভুত সম্পদে ভরে দিতেন। পৃথিবীর যাবতীয় ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহর করুণা অতি উত্তম। আরও বলা হয়েছে, আখেরাতে যার আমল কম হবে এবং বিনিময়ে শাস্তির ফায়সালা হবে তখন আফসোস করে কোনো লাভ হবে না। যা করার দুনিয়াতে থেকেই করতে হবে।

সুরা জুখরুফ, আয়াত ৪৬-৮৯
ফেরআউনের কাছে হজরত মুসা (আ.)-এর প্রেরণের প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। ফেরআউনের হঠকারিতা ও দাম্ভিকতা কোনো কাজে আসেনি। বরং আল্লাহর হুকুম মেনে যে চলবে তার জন্য রয়েছে অফুরন্ত খুশির সংবাদ। এরপর বলা হয়েছে, ইসলাম নারীকে তার আসল মর্যাদায় উন্নীত করে। যারা আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী চলবে তারা পরকালে জান্নাতে বসবাস করবে। তারপর আল্লাহ তাআলা রাসুল (স.)-কে নির্দেশ প্রদান করে বলছেন আপনি জাহেলদের এড়িয়ে চলুন এবং বলুন সালাম, অচিরেই তারা নিজেদের পরিণতি জানতে পারবে।

সুরা দুখান, আয়াত ১-২৯
মক্কার মুশরিকরা দুর্ভিক্ষের দিনে যে ধোঁয়াচ্ছন্ন অবস্থা দেখতে পেয়েছিল তার বিবরণ রয়েছে এই সূরায়। তাই একে সুরা দুখান বলা হয়। সুরার শুরুর দিকে বলা হয়েছে আল্লাহ যেদিন অপরাধীদেরকে পাকড়াও করবেন সেদিন খুব ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। তবে আল্লাহ তাদেরকে অবকাশ দেন। সময় থাকতেই সুযোগ কাজে লাগানো উচিৎ।

সুরা দুখান, আয়াত ৩০-৫৯
আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে যে ফেরআউনের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন সে প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। এরপর কাফেরদের জন্য প্রস্তুতকৃত ভয়াবহ শাস্তি এবং মুমিনদের জন্য সুসজ্জিত নেয়ামতগুলোর বর্ণনা দিয়ে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

সুরা জাসিয়া, আয়াত ১-৩৭
জাসিয়া শব্দের অর্থ হাঁটু গেড়ে বসা। কেয়ামতের দিন মানুষ ভীতির কারণে আল্লাহর দরবারে হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে। এই ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা সূরায় থাকায় এটিকে সুরা জাসিয়া বলা হয়। সুরার শুরুর দিকে সৃষ্টিজগতের সেইসব নিদর্শনের আলোচনা রয়েছে, যার প্রতিটি আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা এবং কুদরত ও একত্ববাদের জীবন্ত প্রমাণ। তারপর আসমানি বার্তা শুনে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের পরিণতির বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

এরপর বনি ইসরাইলকে দেওয়া আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তবে নেয়ামতের কদর না করায় তারা শাস্তির যোগ্য হয়েছিল। সব যুগের কাফেরদের একই অবস্থা হবে। এরপর কেয়ামত ও হাশরের মাঠের বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –