• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২১  

জামাতে নামাজ আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। ইরশাদ হয়েছে ‘তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা : বাকারা : ৪৩) অর্থাৎ জামাতে নামাজ আদায়কারীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করো।

নবীজি (সা.) সারা জীবন জামাতে নামাজ আদায় করে দেখিয়েছেন, নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন জামাতের সঙ্গেই নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি ইন্তেকাল আগে অসুস্থতার সময়ও জামাত ছাড়েননি। সাহাবায়ে কেরামের পুরো জীবনও সেভাবে অতিবাহিত হয়েছে। (বোখারি : ৬৪৪)।

ইসলামের প্রতিটি বিধানেই দুনিয়া-আখেরাতের অসংখ্য কল্যাণ নিহিত আছে। ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত প্রতিটি হৃদয় সেসব কল্যাণ উপলব্ধি ও অবলোকন করে। মোমিনের জীবনে ঈমানের পর আবশ্যকীয় একটি বিধান হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়। এর কল্যাণ বলে শেষ করা যাবে না। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত বিধান হচ্ছে জামাতে আদায় করা। এ বিধানটিরও তাগিদের সঙ্গে বহুবিধ ফায়দার কথা হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে। যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।

পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা, যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয়। (অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি) (মুসলিম : ১০৯৩)।

শরিয়ত অনুমোদিত কোনো ওজর বা অপারগতা ছাড়া জামাতে শরিক না হওয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গোনাহগার হবে। (আবু দাউদ : ৪৬৪)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে এক রাকাতে ২৭ রাকাতের সাওয়াব লাভ হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ (মুসলিম-১৪৭৭)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে প্রতি কদমে নেকি লাভ হয় এবং গোনাহ মাফ হয়। সঙ্গে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে তার প্রতি কদমে একটি নেকি দেওয়া হয়। একটি করে গোনাহ মাফ করা হয়। একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। (মুসলিম-১০৯৩)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে প্রথম কাতারের সাওয়াব লাভ করার সুযোগ হয়। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ যদি আজান এবং প্রথম কাতারে নামাজের সাওয়াব জানতো তাহলে প্রয়োজনে লটারি করে হলেও তারা তা লাভ করতো। (বোখারি : ৬১৫)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে সারা রাত ইবাদতের সাওয়াব লাভ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামাতে আদায় করে, সে যেন অর্ধরাত্রি ইবাদত করল। আবার যদি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, তবে সে যেন পূর্ণ রাত ইবাদত করল। (মুসলিম-১৪৯১)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে জাহান্নাম ও মুনাফেকী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত প্রথম তাকবিরের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দুটি পুরস্কার দান করবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। দুই. মোনাফিকের তালিকা থেকে তার নাম কেটে দেবেন। (তিরমিজি : ২৪১)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে সারা দিন আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকে। আল্লাহর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে যে কষ্ট দিবে, আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ-২/২৯)।

বিনা ওজরে জামাত পরিত্যাগকারীর নিন্দায় নবীজি কঠোর কথা বলেছেন। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমার প্রাণ যার হাতে, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ (বোখারি : ৬১৮)।

যেসব কারণে জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি আছে। যথা:
১. যদি মুষলধারে বৃষ্টি হয়। (বোখারি : ১১২৬)।
২. প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হওয়ার অবকাশ আছে। (বোখারি : ৬২৬)।
৩. রাস্তায় বেশি কাদা হলে। (বদরুল মুনির : ৪/৪১৯)।
৪. অতি আঁধার হওয়া। (জমউল জাওয়ামে : ১/৩০৫৮)।
৫. রাতে যদি অতিমাত্রায় মেঘ হয়। (মুসনাদে আহমাদ : ৫৩০২)।
৬. অসুস্থ হলে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৪)।
৭. দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জন্য। (বোখারি : ৬২৭)।
৮। এমন বৃদ্ধ, যিনি মসজিদে আসতে সক্ষম নন। (ইবনে মাজাহ : ৭৮৫)।
৯. কোনো রোগীর সেবাশুশ্রষায় আত্মনিয়োজিত থাকলে। (প্রাগুক্ত)।
১০. ঘন ঘন প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে। (তিরমিজি : ১৩২)।
১১. বন্দি অবস্থায়। (ইবনে মাজাহ : ৭৮৫)।
১২. এক পা বা উভয় পা কর্তিত হলে। (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
১৩. এমন রোগ হওয়া, যার কারণে চলতে অক্ষম। যেমন অর্ধাঙ্গ রোগ ইত্যাদি।
১৪. খানা সামনে, সেও ক্ষুধার্ত, মনের আকর্ষণ খানার দিকে। এমন অবস্থায় জামাতে না গেলেও চলবে। (বোখারি : ৬৩১)।
১৫. সফরের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। ( বোখারি : ৩/৬৭)।
১৬. জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে কোনো সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জামাত ত্যাগ করতে পারবে। (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
১৭. জামাতে যাওয়ার কারণে ট্রেন, ফ্লাইট বা গাড়ি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে জামাতে শরিক না হওয়ার অনুমতি আছে। (আবু দাউদ : ৪৬৪)।

তবে মহিলাদের জন্য মসজিদ থেকে ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী (রা.) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদীর স্ত্রী রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সঙ্গে নামাজ পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজি (সা.) বললেন আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সঙ্গে নামাজ পড়তে পছন্দ কর। অথচ তোমার একান্ত রুমে নামাজ পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামাজ পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামাজ পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামাজ পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামাজ পড়ার চেয়ে। তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামাজ পড়েন মৃত্যু পর্যন্ত। (সহীহ ইবনে খুজাইমা-১৬৮৯, ইলাউস সুনান-৩/২৬)।

এ হাদিস স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, নারীরা মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়বে। এটাই নবীজির পছন্দ। সুতরাং নারীরা বাড়িতে আদায় করবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –