• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিজয়ের মাসে অপশক্তির আস্ফালন রুখতেই হবে

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২০  

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী   

আজ ১ ডিসেম্বর। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয়ের মাসের প্রথম দিন। ৪৯ বছর আগে এই মাসের ১৬ তারিখে পরাজিত পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের সেনাপতিরা আত্মসমর্পণ করেছিল। বিজয়ীর বেশে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহরে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁদের কণ্ঠে ছিল গগনভেদী স্লোগান—‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। ৪৯ বছর আগের ঢাকার এই দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে এক ফরাসি সাংবাদিক কেঁদেছিলেন। প্যারিসের ‘লা মঁদ’ কাগজে তিনি লিখেছিলেন, ‘টেলিভিশনে ঢাকায় ১৬ই ডিসেম্বরের দৃশ্য দেখে আমি কেঁদেছি। আমার মনে পড়েছিল ১৯৪৫ সালে নাৎসিদের দখলমুক্ত হওয়ার পর দ্য গলের নেতৃত্বে ফরাসি মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ীর বেশে প্যারিসে ঢোকার দৃশ্য।’ ‘ভিভা লা ফ্রান্স’ স্লোগানে সেদিন প্যারিসের আকাশ-বাতাস মুখরিত ছিল।

ফরাসিরা তাদের রাজাকার অর্থাৎ নাৎসি কোলাবরেটরদের কঠিন শাস্তি দিয়েছিল। কোলাবরেটরদের নেতা মার্শাল পেঁত্রাকে বয়সের কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে জেলে কাটাতে হয়েছে। ফ্রান্সে দেশদ্রোহী ও কোলাবরেটররা আর মাথা তোলার সাহস ও সুযোগ পায়নি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দীর্ঘকাল পর ফ্রান্সের গণতন্ত্রে যখন সংকট দেখা দিয়েছিল, তখন মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি দ্য গলের নেতৃত্বেই আবার শাসনতান্ত্রিক সংস্কার দ্বারা সংকট কাটিয়ে উঠেছিল দেশটি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও দেশের রাজনৈতিক মুক্তির পর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের পথে এগিয়েছিলেন। ঠিক এই সময় তাঁকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার শত্রুরা ক্ষমতা দখল করে। ফ্রান্সে বা অন্য কোনো দেশে যা হয়নি, বাংলাদেশে তা হয়েছে। অর্থাৎ স্বাধীনতার শত্রু এবং পাকিস্তানের হানাদারদের কোলাবরেটররা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর ক্ষমতা দখল করে এবং দীর্ঘ ২১ বছর এই ক্ষমতা নানা পরিচয়ে কুক্ষিগত করে রাখে। এই ২১ বছর স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রাজাকার কোলাবরেটরদের গাড়িতে উঠেছে। জাতীয় সংগীত অবহেলিত হয়েছে। রাষ্ট্রের চার মূল আদর্শের ভিত্তি নষ্ট করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সংবিধান বিকৃত করা হয়েছে। জাতির পিতা, চার জাতীয় নেতাসহ কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।

এই কয়েক বছর বিজয় দিবস পালিত হয়েছে তার মূল চেতনা ও প্রণোদনা হারিয়ে। ভূতের মুখে রাম নাম শোনার মতো একাত্তরের পরাজিত শত্রুর মুখে শুনতে হয়েছে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্যের কথা। তারা এই তাৎপর্যকে বিকৃত করেছে। সম্ভবত ইতিহাসের গতি অপ্রতিরোধ্য বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা যুদ্ধের রণক্ষেত্রে তাদের পরাজয়ের পর এবার নির্বাচনের রণক্ষেত্রে দীর্ঘকাল পর পরাজিত হয়েছে এবং স্বাধীনতার আদর্শের ভূলুণ্ঠিত পতাকা আবার বাংলাদেশের আকাশে উড়েছে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে দেশের আকাশ-বাতাস আবার মুখরিত হয়েছে।

স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে এটা বাংলার মানুষের দ্বিতীয় দফা জয়লাভ। এই যুদ্ধেও নেতৃত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ এবং দলের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এখন বিজয় দিবসে বিশ্বত্রাস করোনা মহামারির মধ্যেও যে বাংলার মানুষ বিজয় দিবস পালনের উৎসবে মেতে উঠেছে, তার কারণ বিজয় দিবস আবার স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রকৃত বিজয় দিবসে পরিণত হয়েছে এবং জাতির পিতাসহ সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার প্রতি জাতি বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে পারছে।

সবচেয়ে বড় কথা, এই ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর বছর। মুজিববর্ষ। এই মুজিববর্ষে বিজয় দিবস পালনের তাৎপর্য অনেক বেশি। আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্ধশত বছর বয়সে পা দেবে। তখন আমাদের পেছনের দিকে তাকিয়ে খতিয়ান হবে এই ৫০ বছরের স্বাধীনতা আমাদের কী দিয়েছে এবং কী দেয়নি।

বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়, তারা একই শতকে (কুড়ি শতকে) দু-দুবার বিদেশি শাসকদের শৃঙ্খল ভেঙেছে। একবার ১৯৪৭ সালে, আরেকবার তারই ২৫ বছর পর ১৯৭১ সালে। একাত্তর সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তারা পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক শাসনের বেড়াজাল ভেঙে দেয়। এই সশস্ত্র যুদ্ধের বিজয় দিবসই ১৬ই ডিসেম্বর। ভারতের এক বিখ্যাত সাংবাদিক বলেছেন, ‘আমরা ভারতীয়রা ইংরেজদের সঙ্গে আপস করে তাদের দেওয়া ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। আমাদের কোনো বিজয় দিবস নেই। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের সব ধর্ম ও গোত্রের মানুষের সম্মিলিত সশস্ত্র যুদ্ধের দ্বারা। তাদের একটি বিজয় দিবস আছে। তারা গর্বের সঙ্গে দাবি করতে পারে, তারা বিজয়ী জাতি এবং একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আমরা এই দাবি করতে পারি না।’

আমাদের যেমন বিজয় দিবস আছে, তেমনি এই বিজয় দিবস স্বাধীনতার শত্রুদের দ্বারা অপহৃতও হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সমমনা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দল দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রাম দ্বারা এই বিজয় দিবসের হারানো সম্মান ও গৌরব ফিরিয়ে এনেছে। ২০০৯ সাল থেকে আমরা যে বিজয় দিবস পালন (সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসও) করছি, তা আর কিছু না হোক শকুনের খাপমুক্ত বিজয় দিবস।

এই দিবসে ভিভা লা ফ্রান্সের মতো জয় বাংলা স্লোগান আবার সহস্র কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতি, সন্ত্রাসসহ অনেক সমস্যাই এখনো সমাধান করতে পারেনি; কিন্তু দ্বিধাহীনচিত্তে ঘোষণা করতে পারছে আমরা বাঙালি। আরবের মুসলমানরা যেমন বলছে আমরা আরব; ইরানের মুসলমানরা যেমন দাবি করছে তারা ইরানি; তেমনই বাংলাদেশের মুসলমানরা এমন দাবি করতে পারছে আমরা বাঙালি। বাংলাদেশের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক সভ্যতা-সংস্কৃতির আমরা উত্তরসাধক ও উত্তরসূরি।

কিন্তু বাঙালির এই স্বাধীন অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার অবাধ বিকাশের পথে সবচেয়ে বড় বাধা সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা দ্বারা যখন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি, তখন আমদানি করা হয়েছে ধর্মান্ধতা। পবিত্র ধর্মের সঙ্গে এই ধর্মান্ধতার কোনো সম্পর্ক নেই। ধর্ম শান্তি ও মানবতার বাণী প্রচার করে, তেমনি ধর্মান্ধতা ধর্মের পাগড়ি মাথায় হিংসার বাণী ছড়ায়। মানবতার চরম শত্রুতা সাধন করে। এই ধর্মান্ধতা কী ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে আনে বর্তমান আফগানিস্তান, ইরাক তার প্রমাণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা এখন এই ধর্মান্ধদের মাঠে নামিয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ গত ৫০ বছর ধরে যে অর্জন করেছে, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা, সহনশীল সমাজব্যবস্থা, উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা—সব কিছু ধ্বংস করে দেশটাকে আবার মধ্যযুগীয় অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

ধর্মের নামে কত মিথ্যাচার করা যায় তার প্রমাণ, দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচার শুরু হলো—আমাদের জাতীয় পতাকায় সূর্য রয়েছে, এটা বেদাত বা ধর্মবিরোধী। কারণ এই পতাকায় হিন্দুরা পূজা করে, সেই সূর্য রয়েছে। এরপর বলা হলো, মাদরাসায়-স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না, কারণ এই গান হিন্দু কবির লেখা (রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন না, ছিলেন ব্রাহ্ম)। তারপর যাত্রা, জারিসারি, নবান্ন, শারদ উৎসব, বসন্ত উৎসবকে হিন্দুর উৎসব আখ্যা দিয়ে তা ধর্মবিরোধী প্রচার করা হয়। টাকার নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে বলেছে, এই নোট পকেটে নিয়ে নামাজ পড়া যাবে না। কারণ নোটে মানুষের ছবি রয়েছে। অথচ সৌদি আরবের টাকার নোটেও সৌদি বাদশাহর ছবি রয়েছে।

এভাবে এরা ভাষা শহীদ মিনার ভাঙার চেষ্টা করেছে। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সমালোচনা করেছে। সবই নাকি ধর্মবিরোধী ও হিন্দুয়ানি। তালিকা দীর্ঘ করব না। সব শেষে এই অজ্ঞ/ধর্মান্ধতা এসে ঠেকেছে দেশে ভাস্কর্য নির্মাণে। পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশেই সে দেশে জাতীয় নেতা ও বীরদের ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে তফাত সবাই জানে। ভাস্কর্য শহরের সৌন্দর্য বর্ধন ও জাতীয় হেরিটেজ রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়। মূর্তি তৈরি করা হয় পূজা করার জন্য।

এই পার্থক্য বারবার বলা সত্ত্বেও বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলামকে সামনে খাড়া করে ধর্মান্ধ অপশক্তি আবার মাঠে নেমেছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেশটিকে আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার রাজনৈতিক অসৎ মতলবে। যে পাকিস্তান এখন শরিয়া রাষ্ট্র এবং যে দেশের জামায়াতিদের কাছ থেকে বাংলাদেশের হেফাজতিরা শিক্ষা নিয়েছে ভাস্কর্য ইসলামবিরোধী, তাদের ‘পিতৃভূমি’ পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের অদূরে প্রাচীন নগরী তক্ষশীলায় নিয়ে যাওয়া উচিত (আমি নিজে গিয়েছিলাম)। সেখানে শুধু ভাস্কর্য নয়, দুই হাজার বছরের পুরনো অসংখ্য বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। রয়েছে বৌদ্ধ যুগের নানা উপকরণ। পৌরাণিক তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ও এখানে অবস্থিত ছিল। বৌদ্ধ যুগের এসব মূর্তি পাকিস্তানের ‘ইসলামী সরকার’ সযত্নে সংরক্ষণ করেছে একটি জাদুঘরে। এই জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য দুনিয়ার সারা এলাকা থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন। পাকিস্তান সরকার লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে এই পর্যটকদের কাছ থেকে। বাংলাদেশের হেফাজতের নতুন আমির জুনাইদ বাবুনগরীর কাছ থেকে জানতে ইচ্ছা করে, পাকিস্তানে বুদ্ধমূর্তি সংরক্ষণ সম্পর্কে তিনি কী বলেন?

বাংলাদেশে ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যাপারটা সম্ভবত এতটা গড়াত না যদি সরকার গোড়াতেই শক্ত হতো। ঢাকা হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যখন বাউল স্থাপত্যের ভাস্কর্য ধর্মান্ধদের দাবিতে সরানো হয়, তখনই সমস্যাটির শুরু। তারপর বিমানের ঢাকা অফিসে বলাকার ভাস্কর্য ভাঙন, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে থেকে হেফাজতিদের দাবি অনুযায়ী গ্রিক ভাস্কর্য অপসারণ এই ধর্মান্ধ ব্যক্তিকে আশকারা জুগিয়েছে। এই ধোলাইখাল এলাকায় জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দেওয়ার হুমকি দেখাতে সাহস পেয়েছে হেফাজতি নেতা।

এই নেতারা যে কত ভীরু তার প্রমাণ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজত নেতা মমিনুল হক (যিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি দিয়েছেন), তাফসিরুল কোরআনের জলসায় তাঁর যাওয়ার কথা ছিল প্রধান অতিথি হিসেবে। চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা তাঁর বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই তিনি আর হাটহাজারীতে যেতে সাহস করেননি। ঢাকায় সাংবাদিক সভা ডেকে বলেছেন, ‘আমি তো বঙ্গবন্ধুর বিরোধী নই, ভাস্কর্যের বিরোধী।’ শুধু ভাস্কর্যের বিরোধী হলে এই ভাস্কর্য জাতির পিতার তা জেনেশুনেও সেই ভাস্কর্যের হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা হবে এমন কথা কেউ বলে?

হেফাজতের নতুন আমির জুনাইদ বাবুনগরী হাটহাজারীর সমাবেশে শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেননি, কাদিয়ানি সম্প্রদায় সম্পর্কেও বিষোদগার করেছেন, যা জাতিবিদ্বেষ ছড়ানোর অপরাধের মধ্যে পড়ে। এটা আমাদের রাষ্ট্রাদর্শের বিরোধী। আশকারা পেলে এই ধর্মব্যবসায়ীদের গর্জন আরো বাড়বে। আমার কথা, চট্টগ্রামের মতো ঢাকার ছাত্র-জনতাও এই ধর্মান্ধ অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং রাজপথে নেমেছে। মনে হয়, প্রয়োজনে শাহবাগ চত্বরের যুবজনতার ঐতিহাসিক মঞ্চের মতো এই ধর্মান্ধদের প্রতিরোধে তারা বিরাট নাগরিক মঞ্চ গড়ে তুলবে। এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরোধিতার ব্যাপারে আওয়ামী লীগও তাদের নীরবতা ভেঙেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তীব্র ভাষায় তাঁর দলের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং ধর্মব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

এটা অবশ্যই স্বাধীনতার পক্ষের নেতৃস্থানীয় শক্তি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশের প্রগতিশীল যুবজনতা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতি গ্রিন সিগন্যাল। এখন করোনায় দেশ বিপর্যস্ত হতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মনোবল ভাঙেনি। এই মুজিববর্ষে, বিশেষ করে বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার শত্রু ও ধর্মান্ধ অপশক্তিকে অবশ্যই রুখতে হবে। তাদের স্পর্ধা ও আস্ফাালনের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। তবে এই জবাব মাসলশক্তির জোরে দেখানো কোনো কারণেই ঠিক হবে না। বরং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে একমত হয়ে বলি, মারমুখী না হয়ে তরুণদের উচিত হবে যুক্তির সাহায্যে, সচেতন জনতার প্রতিরোধ গড়ে তুলে একাত্তরের পরাজিত শক্তির এই উত্থান ঠেকাতে হবে।

এই বিজয়ের সঙ্গে পরাজিত শক্তির আরো অনেক কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক এতিম বিএনপির ভাড়া করা অভিভাবক জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার পতনের অবস্থায় এসেছে। এখন একটু জোরে ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে।’ বহুকাল ধরে তো এই সরকারকে ধাক্কা দিচ্ছেন জাফরুল্লা, কামাল হোসেন, ইউনূস গং। সরকার পড়ে যায়নি। বরং তাঁরাই একে একে খসে পড়েছেন। এই বিজয়ের মাসে পরাজিত শক্তির এই পলাতক নেতারা যাতে তাঁদের বিবর থেকে মাথা বের করতে না পারে তার দিকে লক্ষ রাখাও বিজয়ী জনতার কর্তব্য। এদের সম্পর্কে নজরুলের ভাষায় বলতে হয়, ‘ওরা দিক্ গালি, মোরা হাসি খালি বলিব ইন্না...রাজেউন।’

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –