• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বেকার নারীদের পথ দেখাচ্ছেন এমি

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২৪  

হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ভাড়া বাড়ির শয়ন কক্ষের কোণে নারীদের বিভিন্ন ডিজাইন ও রকমারি পোশাক বিক্রি ও হস্তশিল্পের কাজ করে স্বাবলম্বী ও সফল হয়েছেন এমি আক্তার এমি ৷ শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, প্রায় অর্ধ শতাধিক গরিব, অসহায় ও দরিদ্র নারীদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থানও৷ ফলে এলাকায় বেকার নারীদের আলোর পথ দেখাচ্ছেন তিনি৷ 

সফল এই নারী উদ্যোক্তা এমি আক্তারের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার। এমি আক্তার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভজনপুর এলাকায় ভাড়া বাড়ি বসবাস করলেও তার স্বামী বাড়ি দেবীগঞ্জ উপজেলার কাঁচারীপাড়ায়৷ এমি আক্তার স্বামী বদরুদ্দোহা প্রধান জাহাঙ্গীর পেশায় একজন পাথর ব্যবসায়ী। তাদের ঘরে এক মেয়ে রয়েছে সে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে এবং তার মেয়ের নামেই প্রতিষ্ঠিত করেন স্নেহা ফ্যাশন অ্যান্ড বুটিক হাউজ৷ 

এমি আক্তার অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে তিনি ২০২১ সালে তেঁতুলিয়া উপজেলা, জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে হয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতা। এমি আক্তারের সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে স্থানীয় নারীরাও৷ বেকার নারীদের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণেও ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে থাকেন তিনি৷ 
 
জানা যায়, এমি আক্তারের স্বামী বদরুদ্দোহা প্রধান জাহাঙ্গীর ২০১০ সালে ব্যবসায়িক কাজে দেবীগঞ্জ থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর (দেবনগড়) কলেজ পাড়া এলাকায় এসে ভাড়া বাড়িতে উঠেন৷ সেখানে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার৷ তবে স্বামী ব্যবসার কাজে সারাদিন বাইরে থাকলেও মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়িতে বেকার সময় পার করতেন। তবে তিনি ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করার।

সেই স্বপ্ন আর বেকারত্ব থেকে বেড়িয়ে আসতে ২০১৪ সালে  নিজের জমানো ৩০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন তার ব্যবসা, ভাড়া বাসার শোবার কক্ষেই খুলে বসেন ছোট্ট কাপড়ের শো-রুম। নামও দেন মেয়ের নামে স্নেহা ফ্যাশন ও বুটিক হাউজ। প্রথমে তিনি ঢাকায় এক আত্মীয়য়ের সহযোগিতায় নারীদের  বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে আসেন। এভাবে ধীরে ধীরে চলতে থাকে তার ব্যবসা৷ এভাবে কয়েক বছরে নারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে তার শো-রুমটি৷ 

এদিকে এমি আক্তার কাপড়েই সফল হয়ে থেমে থাকেনি। নিজের চেষ্টায় আয়ত্ব করেন নকশী কাঁথাসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ পাশাপাশি তৈরি করা শুরু করেন বিভিন্ন আঁচার৷ এভাবে তার হাতের তৈরি নকশী কাঁথা বিক্রি চলতেই থাকে। পরবর্তীতে তার ব্যবসা অফলাইনের পাশাপাশি  অনলাইনেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে৷ 

এমি আক্তার নিজের আয়ের পথ তৈরির পর শুরু করেন এলাকার গরিব ও বেকার নারীদের নিয়ে কাজ করা। ভাড়া, বাড়িতে স্থান সংকলন না থাকায় জেলা শহরের নিমনগর এলাকায় বাবার বাড়িতে নকশীকাঁথার কাজ শেখান নারীদের৷ পাশাপাশি বিভিন্ন পোশাকে কারচুপির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নারীরা৷  

সরজমিনে দেখা যায়, এমি আক্তারের বাড়িতে শো-রুমে দিনভর সমাগম ঘরে নারী ক্রেতাদের। এমিও আক্তারও অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি করেন পোশাক৷ এছাড়া  নারীরা নকশীকাঁথা, থ্রি-পিস, শাড়ি, চাদর  ও পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাকে নকশার কাজ করেন। অনেক নারী আবার নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কারচুপির কাজ করেন। এভাবে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী কাজ করছেন। আর এসব নকশার ডিজাইন করে দেন এমি আক্তার এমি নিজেই। 

এমি আক্তারে শো-রুমে পোশাক কিনতে আসা ক্রেতা শেফালী বেগম বলেন, আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এমি আপার বাড়িতে এসে সুলভ মূল্যে পছন্দের পোশাক ক্রয় করি৷ এখানে আমরাদের নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিস ও বিছানার চাঁদরসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনতে পারি৷ 

আরেক ক্রেতা ফয়জুন নেছা বলেন, আমাদের নারীদের জন্য এমি আপার শো-রুম অনেক সুবিধাজনক। আমরা যেকোনো সময় তার বাড়িতে এসে কাপড় কিনতে পারি৷ কখনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে সেটাও করতে পারি৷ বাজারে যেটা সহজে করা যায় না৷ 

এমি আক্তারের নকশীকাঁথা কাজ করতে আসা সিনথিয়া আক্তার বলেন, আমি আগে বাড়িতে বসে বেকার সময় পার করতাম কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এখানে এসে আমি নকশীকাঁথার কাজ করি। এতে যা পাই তা দিয়ে আমি আমার পরিবারের কাজে লাগাতে পারি।

মুন্নী আক্তার বলেন, এমি আপা আমাদের জন্য যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন এতে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি৷ বাড়িতে বেকার সময় পার না করে সে সময়টা কাজে লাগাতে পারছি আমরা৷ 

নাকী আক্তার বলেন, আমরা এমি আপার বাাড়ি থেকে বিভিন্ন শাড়ি নিয়ে গিয়ে বাড়িতে অবসর সময়ে কারচুপি ও পুঁথি লাগানোর কাজ করি৷ এতে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসারের কাজে লাগাই৷ 

উদ্যোক্তা ও স্নেহা ফ্যাশান হাউক অ্যান্ড বুটিক হাউজের স্বত্বাধিকারী এমি আক্তার এমি বলেন, আমার ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করব এবং পাশাপাশি আশপাশের নারীদের জন্য কিছু করব। ছোট্ট কাপড়ের ব্যবসা ও হস্তশিল্পের কাজ করে আজ আমি সফল হয়েছি। আমরা নারী, আমরাই পারি। নারীরা সমাজের বোঝা নই। আরো অনেক নারী আছে তাদের নিয়ে কাজ করব৷ তাই সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতা পাই তাহলে আরো বেশি উপকৃত হব। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, এমি আক্তার আমাদের তেঁতুলিয়ার গর্ব৷ তিনি নিজের পরিশ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মতো যে নারীরা কাজ করছে তাদের জন্য আমরা বিভিন্ন সহযোগিতা করে থাকি। এমি আক্তারের আরো সফলতা কামনা করছি। পাশাপাশি তার কোন সহযোগিতা লাগলে আমরা তার পাশে থাকব। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –