• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বোদা উপজেলার পটভূমি

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

বাংলাদেশের শেষ প্রামেত্ম উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি শামত্ম জনপদের নাম বোদা উপজেলা। পঞ্চগড় জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যত এ উপজেলা দিয়ে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক। এর আয়তন ৩৪৯.৪৭ বর্গ কিলোমিটার এবং লোক সংখ্যা ২,০০,৬৯৩ জন।

অবস্থানঃ  উত্তরে পঞ্চগড় পূর্বে দেবীগঞ্জ দক্ষিণে আটোয়ারী ও ঠাকুরগাঁও এবং পশ্চিমে আটোয়ারী উপজেলা অবস্থিত।

অক্ষাংশ                                   ঃ ২৬-০৫ মিঃ হতে ২৬-২০ মিঃ পর্যমত্ম ।

দ্রাঘিমাংশ                                 ঃ  ৮৮-২৮ মিঃ হতে ৮৮-৪৬ মিঃ পর্যমত্ম ।

থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠার তারিখ        ঃ       ১৭৯৭ খ্রিঃ

উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার তারিখ   ঃ  ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৮২খ্রিঃ।

 

        বোদা উপজেলার ইতিহাস অতি প্রাচীন। এর নাম করনেও অনেক মতভেদ রয়েছে, মনে করা হয়- অতি প্রাচীনকালে  করতোয়া নদী অনেক খরস্রোতা ও বৃহৎ আকারে এতদঅঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবহমান ছিল। কথিত আছে সতি বা পার্বতী দেহ ত্যাগ করলে তঁার দেহের বিভিন্ন অংশ অবিভক্ত ভারত উপ-মহাদেশের একান্নটি স্থানে পতিত হয়। দেহের অংশগুলি যে যে স্থানে পতিত হয় সে স্থানগুলী পীঠস্থান হিসেবে স্বীকৃত হয়। সতির বাম পায়ের গোড়ালী বোদা এলাকার তিসত্মা নদীর তটে শালবাড়ি নামক স্থানে পতিত হয়। বর্তমানে যা বোয়ালমারি নামে পরিচিত। বোয়ালমারি হিন্দুদের একটি তীর্থস্থান। প্রতি বছর চৈত্র মাসে অমাবস্যার মধুকৃষা ত্রয়োদশীতে এখানে স্নান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত স্নান উপলক্ষ্যে একটি মেলা বসে যা বোয়ালমারি বারুণী মেলা নামে পরিচিত। এর পার্শ্বেই বদেশ্বরী নামক স্থানে বদেশ্বরী মন্দির স্থাপন করা হয় । পূন্যস্থান তদানিমত্মন কোচ রাজা প্রাণ নারায়ন বদেশ্বরী মন্দির নির্মান করেন। কালক্রমে বদেশ্বরী নামানূসারে এ এলাকার নাম হয় বোদা।

            এছাড়া জানা যায় যে, মোঘল শাসন আমলে শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাকে কতগুলি পরগনা বা চাকলা’য় বিভক্ত করা হয়। কুচবিহার মহারাজার রাজত্ব ছিল উত্তরে জলপাই জেলার রাজগঞ্জ থানা, পূর্বে পাটগ্রাম থানা দক্ষিণে বোদা-দেবীগঞ্জ পর্যমত্ম বিস্তৃত । চাকলার অভ্যমত্মরের জমিদারীর নামকরণ করা হয় ‘‘চাকলাজাত এস্টেট’’। কুচবিহার  মহারাজার চাকলাজাত এস্টেটের হেড অফিস ছিল বোদায়। এখান থেকেই খাজনা আদায়ের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। খাজনা আদায়ের প্রধান কর্মকর্তাকে বলা হতো নায়েব। বোদা চাকলায় কর্মরত নায়েবের নাম ছিল বৈদ্যনাথ। বৈদ্যনাথ নায়েব মহাশয় সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পালকিতে চলাফেরা করতেন। জনশ্রুতি আছে নায়েব বৈদ্যনাথকে সংক্ষেপে ‘বৈদ্য’ বলে ডাকা হতো। কালক্রমে ‘বৈদ্য’ শব্দ থেকে বোদা নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন।

থানা সৃষ্টির ইতিহাসঃ  এতদাঞ্চলে জনগণ প্রজাহিতৈষি জমিদার দেবী সিংহের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৭৯৬ সালে বৃটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রজা বিদ্রোহ বা কৃষক বিদ্রোহ করেন। এতদ অঞ্চলে কোন প্রশাসনিক কোন ই্উনিট না থাকায় এবং এলাকাটি ঘন অরণ্য বেষ্টিত হওয়ার কারণে বৃটিশরা প্রথম কৃষক বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হয়। কৃষক বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার এই এলাকায় একটি প্রশাসনিক ইউনিক সৃষ্টি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলশ্রুতিতে প্রথম কৃষক বিদ্রোহের পরের বছর ১৭৯৭ সালে বোদা থানার গোড়া পত্তন করেন। ১৭৭০ - ১৮৬৮ সাল পর্যমত্ম বোদা পরগনা রংপুর জেলার অধীন ছিল। ১৮৬৯ - ১৯৪৭ সাল পর্যমত্ম বোদা ছিল জলপাইগুড়ি জেলার অধীন। কুচবিহার মহারাজা বোদা থানার জন্য প্রদত্ত সম্পত্তি রেন্ট ফ্রি হিসেবে বোদা থানাকে দান করে ১লা সেপ্টেম্বর, ১৮৮৩ তারিখে একটি আদেশ জারি করেন। আদেশটি ৯/১/১৮৮৪ তারিখে কলকাতা গেজেটের প্রথম খন্ডের ১৭৭ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়।

   তদানিমত্মন জলপাইগুড়ি জেলার অধীন তিনটি থানা ছিল ।যথা - ৯১) জলপাইগুড়ি সদর  (২)- রাজগঞ্জ  এবং (৩) বোদা।  বোদা ছিল জলপাইগুলি জেলার বৃহত্তম থানা। বোদা থানার অধিনে দুইটি পুলিশ আউটপোস্ট ছিল। একটি পঞ্চগড়ের উত্তরে জগদল এবং অপরটি করতোয় নদীর পূর্বপাড়ে দেবীগঞ্জ । কালক্রমে দেবীগঞ্জ এবং জগদল পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপামত্মর হয়। জগদল হতে পরবর্তীতে উহা পঞ্চগড় (বর্তমান স্থানে) এ স্থানামত্মর করা হয়। দেশ বিভাগের পর (১৯৪৭ সালের পর) বোদা থানাটি দিনাজপুর জেলার এবং ঠাকুরগঁাও মহকুমার নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৯৮০ সালে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হলে বোদা থানাটি পঞ্চগড় মহকুমার অমত্মভূক্ত হয়। পঞ্চগড় মহকুমার ০৫টি থানার মধ্যে বোদা থানাটি সর্ববৃহৎ। ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বোদা থানার ০৩টি ইউনিয়নঃ মাগুড়া , ধাক্কামারা ও গরিনাবাড়িকে পরবর্তীতে পঞ্চগড়  সদর থানার অমত্মর্ভূক্ত করা হয়।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –