• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

‘মকবুল হজ’এর সওয়াব মিলবে যে দৃষ্টিতে

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২০  

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের পর মা-বাবার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম জাতির ওপর সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা যেমন ফরজ ঠিক মা-বাবার খেদমত করা প্রত্যেক মানুষের ওপরও ফরজ। সর্বস্থায় যেমনি মহান আল্লাহর সব হুকুম পালনে বাধ্য থাকতে হবে, তেমনি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে মা-বাবার অনুগত থেকে তাদের খেদমতও করতে হবে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে মা-বাবার মাধ্যমেই সুন্দর ধরনীর আলো-বাতাস দেখিয়েছেন। পৃথিবীতে মা-বাবাই সন্তানের আপনজন। সন্তানের জন্য মা-বাবার মতো আপন পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। সন্তান জন্ম নেয়ার পর মা-বাবা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন। যে কারণে সৃষ্টিকর্তা মা-বাবার খেদমত করার জন্য সর্বাদিক তাগিদ দিয়েছেন।

সৃষ্টিকর্তা ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মা-বাবার প্রতি সর্বদা সদ্ব্যবহার করো।’

তাদের একজন বা উভয়েই তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে  তাদেরকে ‘উফ’শব্দ বলো না (বিরক্তি, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, ক্রোধ ও ঘৃণাসূচক কোনো কথা) এবং তাদেরকে ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র কথা বলো। মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করো এবং  বলো ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। তোমাদের অন্তরে যা আছে তা তোমাদের প্রতিপালক ভালো করেই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না এবং মা-বাবা, আত্নীয় স্বজন, এতিম-অনাথ, অভাবগ্রস্ত, নিকটাত্নীয়, দূর, প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’ সম্পদ সৃষ্টিকর্তার জন্য যেমনি ব্যয় করতে হবে ঠিক তমনি মা-বাবার খেদমতের জন্যও ব্যয় করতে হবে।

শিক্ষিত ছেলেরা যদি শিক্ষিত স্ত্রী পেয়ে যান, তাহলে মা-বাবার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার সেবায় এগিয়ে এলে তাদের বর্তমান আধুনিক স্টাইল নষ্ট হয়ে যাবে। বিধায় মা-বাবার খেদমতের ধারে কাছে আসতে রাজি হন না-বরং দূরে দূরে থাকতে চান। শিক্ষিত-অশিক্ষিত ছেলেরা তারা তাদের প্রিয়তমা স্ত্রীর কুপরামর্শে মা-বাবার স্বর্গীয় সাহচর্য ছিন্ন করতে বাধ্য হন। যা অনেক হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পশী।

বর্তমান সমাজে এর অন্যতম কারণ ইসলামী সুশিক্ষা ও নৈতিক মুল্যবোধের অবক্ষয়। শিক্ষিত লোক মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে কেন? স্ত্রীর সুপরামর্শ সায় না দিয়ে কুপরামর্শে সায় দেবে কেন? শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা মা-বাবার অবাধ্য হলে জাতি নৈতিকতা শিখবে কোথায়? সন্তানের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চয় মা-বাবার বাধ্য থাকতে হবে। এবং তাদের সেবায় আত্ননিয়োগ করতে হবে। ইসলামের ইতিহাসে মা-বাবার দায়িত্ব ও গুরুত্ব অপরিসীম।

হাদিসে বর্ণিত-যখন কোনো সন্তান তার আপন মা-বাবার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি ‘মকবুল হজ’এর সওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি কোনো ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার এরুপ তাকায় তবুও কি সে এই সওয়াব পাবে? তিনি জবাবে বললেন ‘হ্যাঁ’। আল্লাহ অতি মহান, অতি পবিত্র। 

হাদিসে বর্ণিত আছে যে, তার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক, তার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক, তার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক- এ কথা রাসূল (সা.) তিনবার বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো- ইয়া রাসূলুল্লাহ! কে সে? যার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক। তিনি (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার মা-বাবার একজনকে অথবা উভয়জনকে তাদের বার্ধক্য অবস্থায় পেল, অথচ (তাদের খেদমত করে) সে বেহেশতে প্রবেশ করল না। যে ব্যক্তি তার মায়ের চক্ষুদ্বয়ের মধ্যভাগে চুমা দেবে সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে।’ 

মা-বাবার নেক দোয়া প্রত্যেক সন্তানের সুন্দর জীবনের শ্রেষ্ঠ পাথেয়। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমদেরকে যথাযথ ভাবে মা-বাবার সেবা যত্ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –