• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মধ্যপন্থা: মুমিনের বৈশিষ্ট্য

প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২৪  

ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। উগ্রবাদ নয়, সন্ত্রাস নয়, হেকমতের সঙ্গে দাওয়াত দেওয়াই হচ্ছে ইসলামের সঠিক পথ।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে নাজাতের পথ দেখাতেই বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র মানব জাতির পথ প্রদর্শক হিসেবে রাসূল করে পাঠিয়েছিলেন। তিনি দাওয়াতের মাধ্যমেই মানুষকে মহান আল্লাহর পথে আহ্বান করেছিলেন।

নবী (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা সার্বিকভাবে সুচারুরুপে গড়ে তুলেন সব মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার মতো করে। তিনি (সা.) পরিস্থিতি বুঝে হেকমতের মাদ্যমেই মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন। মহান আল্লাহর পথে চলার পথ দেখিয়েছেন মহান আল্লাহর নির্দেশেই।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

উচ্চারণ: ‘উদ‘উ ইলা-সাবীলি রাব্বিকা বিলহিকমাতি ওয়াল মাও‘ইজাতিল হাসানাতি ওয়া জা-দিলহুম বিল্লাতী হিয়া আহসানু ইন্না রাব্বাকা হুওয়া আ‘লামুবিমান দাল্লা ‘আন সাবীলিহী ওয়া হুওয়া আ‘লামুবিলমুহতাদীন’।

অর্থ: ‘(হে রাসূল!) আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান করুন হিকমত ও সৎ উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলুন উত্তম পন্থায়। আপনার প্রতিপালকের পথ ছেড়ে কে বিপদগামী হয় সে সম্পর্কে তিনি সবিশেষে অবহিত আছেন এবং কারা সৎ পথে আছে সে বিষয়ও তিনি সম্যক অবহিত’। (সূরা: আন নাহল, আয়াত: ১২৫)

দাওয়াতের পথই হচ্ছে ইসলামের প্রকৃত পথ। উগ্রতা, সন্ত্রাস, তথাকথিত জিহাদ করে ইসলামকে এগিয়ে নেয়ার কোনো নির্দেশনা, অনুমতি পবিত্র কোরআনে কিংবা সহিহ হাদিসের কোথাও উল্লেখ নেই। ভ্রান্ত পথের ভ্রষ্ট ‘আক্বীদায় বিপদগামী কিছু তরুণ-যুবক ইসলামের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে উগ্রতাকে লুফে নিয়েছে জান্নাত প্রাপ্তির আশায়। আসলে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা কোরআন সুন্নাহর জ্ঞানে অপরিপক্ক ও নির্বোধ। তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করে ধোঁকায় ফেলে তথকথিত জিহাদের প্রলোভনে আকৃষ্ট করা হয়।

ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, যুলুম ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ

উচ্চারণ: ‘ওয়াল ফিতনাতু আশাদ্দু মিনাল কাতলি’।

অর্থ: ‘ফিতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’।(সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ১৯১)

মানুষ হত্যা নিষেধ করে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا

উচ্চারণ: ‘আন্নাহূ মান কাতালা নাফসান বিগাইরি নাফসিন আও ফাসা-দিন ফিল আরদিফাকআন্নামা-কাতালান্না-সা জামী‘আওঁ ওয়া মান আহইয়া-হা-ফাকাআন্নামা-আহইয়ান্না-সা জামী‘আন’।

অর্থ: ‘কেউ কাউকে নরহত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত হত্যা করলে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল’। (সূরা: আল মায়িদাহ, আয়াত: ৩২)

নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘শেষ জামানায় এমন একটি গোষ্টির আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে বয়সে নবীন, বুদ্ধিতে অপরিপক্ক ও নির্বোধ। তারা পবিত্র কোরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালীও অতিক্রম করবে না। (অর্থাৎ-হৃদয় স্পর্শ করবে না) তারা সৃষ্টির সেরা মানুষের কথাই বলবে কিন্তু দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়’। (আত তিরমিযী)

বিদায় হজের সময় মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে নবী (সা.) বলেন, শুনে রাখো! মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সাবধান! আমার পরে তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মতো কুফরী কাজে লিপ্ত হয়ো না। আল্লাহ তাআলা এবং নবী (সা.) এর সতর্ক বানী মান্য করে চললে সমাজের বুকে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকানণ্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। উগ্রতা, যুলুম, সন্ত্রাস পরিহার করে হিকমাত ও কৌশল প্রয়োগ করে বিনয়-নম্রতা সহকারে মানুষকে মহান আল্লাহর পথে আহ্বান করাই শ্রেষ্ঠ দাওয়াত। ইসলামে কোনো জবরদস্তির বিষয় নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لاَ إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ

উচ্চারণ: ‘লাইকরা-হা ফিদ্দীনি’

অর্থ: ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।’ (সূরা: আল বাকারাহ, ২৫৬)

নীতি, কর্ম আদর্শ ও দর্শনে একপেশে নয় ও চরম পন্থাও নয় বরং ভারসাম্যপূর্ণ থাকাটাই মুসলিমের তথা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ

উচ্চারণ: ‘আল্লাযী খালাকাকা ফাসাওওয়া-কা ফা’আদালাক’।

অর্থ: ‘যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুগঠিত করেছেন এবং তোমাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন।’ (সূরা: আল ইনফিতার, আয়াত: ৭)

ইবাদতের ক্ষেত্রেও মুমিনের জন্য একটা ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। কোনো ব্যাপারেই অতিরঞ্জন আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। সংসার বিবাগি হয়ে সন্ন্যাসী জীবনও যেমন কাম্য নয় তেমনি দ্বীনের ইবাদত থেকে সম্পূর্ণ গাফেল হয়ে মহান আল্লাহকে অমান্য করে কুফরীর জীবন বাঞ্ছীনীয় হতে পারে না। সংসার, পরিবার, পরিজন সমভিব্যবহারে সবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –