• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

২০২৪: বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনের বছর

প্রকাশিত: ১ জানুয়ারি ২০২৪  

২০২৪: বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনের বছর                        
বিশ্বের ইতিহাসে সচরাচর এমন ঘটনা আর ঘটেনি, যা ঘটবে ২০২৪ সালে। ৭৮ দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালে। ২০২৪ সালকে বলা হচ্ছে নির্বাচনের বছর। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব নামে পরিচিতি নির্বাচন হলেও বিশ্ব কর্তৃত্ববাদের কবল থেকে মুক্ত হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাচনি বছর হবে ২০২৪ সাল। ২০২৩ সালের শেষপ্রান্তে জানা যায়, নতুন বছর ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ৭৮টি দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭৮টি দেশে হবে জাতীয় নির্বাচন। ভোট দেবেন বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ। সংখ্যার হিসেবে ৪২০ কোটির বেশি। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’ জানিয়েছে, “২০২৪ সাল হবে পৃথিবীর ভাগ্য পরিবর্তনের বছর। যদি অবাধ, সুষ্ঠ, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়, তাহলে অনেকে দেশেই নেতাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে এবং গণতন্ত্রের ধারা শক্তিশালী হবে। কিন্তু যদি সঠিক মানের নির্বাচন না হয়, তাহলে কর্তৃত্ববাদের বিস্তার আরও বাড়বে।” তারপরেও গণতন্ত্রের বড় উৎসব নির্বাচনে মুখর থাকবে সারা পৃথিবী পুরো ২০২৪ সাল জুড়েই। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে আগামী বছর ৭৮টি দেশে ৮৩টি জাতীয়-স্তরের নির্বাহী বা আইনসভা নির্বাচন করবে। তবে ২০৪৮ সালের আগে আর দেখা যাবে না এই দৃশ্য। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে নির্বাচন। এতে অংশ নেবে অধিকাংশ মহাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার এশিয়া মহাদেশে।

২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে বছরের শেষ পর্যন্ত চলবে একের পর এক নির্বাচন। শক্তিশালী এবং ধনী দেশ থেকে শুরু করে কিছু স্বৈরাচারী ও দুর্বল রাষ্ট্রেও বাজবে ভোটের দামামা। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক নির্বাচন দেখবে বিশ্ব। তবে ব্রাজিল এবং তুরস্কসহ কিছু দেশে সাধারণ নির্বাচন না হলেও স্থানীয় বা পৌরসভা নির্বাচন হবে। বিশ্বের প্রধান প্রধান মিডিয়া, যেমন দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, জিইও টিভি, দ্য ইকোনমিস্ট গুরুত্বে সাথে দেখছে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনগুলোকে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বছর’। এরপর ফেব্রুয়ারিতে দুটি জনবহুল মুসলিম দেশ পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া প্রায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে নির্বাচনে অংশ নেবে।

২০২৪ সালের অনেকগুলো নির্বাচন তথা ‘ভোট উৎসব’ শুরু হয় বাংলাদেশ থেকে। তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ নেয় নি। নির্বাচন হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থক দলগুলো এবং স্বতন্ত্রদের মধ্যে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতা, যারা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। নির্বাচনে জিতলে ক্ষমতার গদিতে ১৫ বছর পূরণ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

বাংলাদেশের নির্বাচনের কদিন পরেই তাইওয়ানে ভোট (১৩ জানুয়ারী)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হবে এবার। কারণ এটি তাইওয়ান প্রণালিতে ভবিষ্যতের সামুদ্রিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে।

ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ায়। বিশ্বের জনবহুল দুই মুসলিম রাষ্ট্র নানা কারণে আলোচিত। ৮ তারিখে হবে পাকিস্তানের ভোট। পরের সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়ায়। পাকিস্তানে ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আনুষ্ঠিকতা শুরু হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে মনোনয়নপত্রের যাচাই-বাছাই। ‘সেনা নিয়ন্ত্রিত’ এ নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ পার্টির নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফই আবার ক্ষমতায় আসতে পারেন বলেই মন্তব্য করছে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষেকরা। কারণ, সদ্য-ক্ষমতাচ্যুৎ ইমরান খানের দল রয়েছে চাপের মধ্যে। স্বয়ং ইমরান খান আটক আছেন কারাগারে।

জালিয়াতি ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ কারণে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না।
ইমরান খান গত বছর সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্বাচনে দাঁড়ানো থেকে তাকে আটকানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে। টিভি স্টেশনগুলিতে খানের বক্তৃতা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের অনেক সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অক্টোবরে পাকিস্তানের পলাতক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ প্রায় ৪ বছর নির্বাসনে থাকার পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ফিরে আসেন। তিনি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এবং অনেককে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছেন যে তিনি আবারো নির্বাচনী চমক দেখাতে পারেন। এদিকে, দেশটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ঘন ঘন জঙ্গি হামলা থেকে শুরু করে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে লক্ষ লক্ষ লোক ঝুঁকিতে পড়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ নতুন নেতৃত্বের দিকে কঠিন সমস্যা ছুড়ে দিয়েছে। টাফ্টস ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ফাহদ হুমায়ুন বলছেন-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা একসঙ্গে চলে। সন্দেহজনক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা যেকোনো সরকারই কেবল দুর্বল অবস্থানে থাকবে না বরঞ্চ তারা রাজনীতিতে টিকে থাকতে সামরিক বাহিনীর উপর নির্ভরশীল হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের ক্ষমতায় কে আসবে তা স্পষ্ট নয়, তবে আমেরিকান সাংবাদিক ডেভিড এ অ্যান্ডেলম্যানের মতে, ইন্দোনেশিয়ায় ধনী ব্যবসায়ি ও সামরিক এলিটদের হাত থেকে ক্ষমতা ফসকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম৷

মার্চ মাসের উল্লেখযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে পুতিন শাসিত রাশিয়ায়। রুশ গণমাধ্যমের ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ রাশিয়ার নির্বাচনে আবারও জয়ী হতে পারেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও আবার জয়ের মুকুট তারই মাথায় থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে দেশটিতে। কারণ, পুতিন রুশ জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটিকে প্রভাবশালী আসনে নিয়ে এসেছেন। রুশ জনতার মধ্যে পুতিনের ইমেজ নির্বাচনে তার জয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।

মে মাসে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র ভারতের সাধারণ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে. প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে আশা নিরাশায় ডুবতে পারেন। কারণ স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর নিষেধাজ্ঞা, কাশ্মীরে নৃশংস সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে প্রতিফলিত তার অস্বাভাবিক, স্বৈরাচারী প্রবণতা ভোটের ন্যায্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি নিপীড়ন ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে উগ্র হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার কারণে ভারতের বিরোধী দলগুলো মোদির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের নেতৃত্বে একাট্টা হয়েছে। ফলে ভারতের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর তার নিয়ন্ত্রণ যেভাবে বজায় রেখেছেন তা ১৯৭০ এর দশকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলেও দেখা যায়নি। যদিও গান্ধী কঠিন হাতে দেশ শাসন করেছিলেন এবং ভারতকে স্বৈরাচারের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ব মঞ্চে ভারতের অবস্থান তখন এত বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না। মোদি ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক সফর করেন। তিনি নিজেকে এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে উপস্থাপন করছেন যিনি দেশকে একটি আধুনিক পরাশক্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন। ২০২৩ সাল ভারতের ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর ছিল। এই বছরে চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হয়েছে ভারত। পাশাপাশি প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শাসক বৃটেনকে অতিক্রম করে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে তারা।

আগস্ট মাসে, ভারত চাঁদে রোভার সফট ল্যান্ডিং করে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হয়ে ওঠে। কয়েক সপ্তাহ পরে সূর্য নিয়ে গবেষণার জন্য ভারত প্রথম মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে। ভারত সেপ্টেম্বরে জি-২০ এর আয়োজন করে। এর মধ্যদিয়ে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তার নেতৃত্বকে প্রসারিত করার সুযোগ পায় নয়াদিল্লি। তবুও, প্রায় এক দশক আগে মোদির প্রথম নির্বাচনের পর থেকে, সমালোচকরা বলে আসছেন যে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের একসময়ের ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক নীতি উদ্বেগজনক গতিতে ভেঙে পড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভারতের সংখ্যালঘুরা বিজেপির নীতির কারণে নির্যাতিত বোধ করছে এবং সরকারের সমালোচকরা সেন্সরশিপের মুখোমুখি হচ্ছেন। মোদির বিরুদ্ধে ২৬টি রাজনৈতিক দলের একটি নবগঠিত জোট তৈরি হয়েছে যা ‘ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত। যার মধ্যে দেশের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস পার্টি ডিসেম্বরে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনে ৪টি আঞ্চলিক নির্বাচনের মধ্যে ৩টিতেই হেরেছে। যা মোদি এবং তার বিজেপিকে উৎসাহিত করেছে।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্লেষকরা বলছেন যে ভারতীয় রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে এবং দলগুলো সামনের মাসগুলোতে প্রচারণা চালাতে গেলে অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। এশিয়া সোসাইটির সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনার সময় এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো সি. রাজা মোহন বলেছেন- মানুষ আশা করছে যে মোদির সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। বিরোধী দলগুলি তাদের খেল দেখাতে পারে। যে স্বপ্নটি ৩ মাস আগেও সম্ভব ছিল তা এখন আরও কঠিন মনে হচ্ছে। তবে ৬ মাস রাজনীতিতে দীর্ঘ সময়।

প্রায় দুই বছর আগে চরম অর্থনৈতিক সংকটে ডুবতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। এ জন্য দেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসেকে দায়ী করেন দেশটির জনগণ। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে হামলা চালালে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এর মধ্যদিয়েই ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ২২ মিলিয়ন মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কা গত বছর দেউলিয়া হয়ে যায়। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধ কিনতে গিয়ে প্রবল সমস্যার মুখে পড়েন।

রাজাপাকসের পদত্যাগের পর ক্ষমতায় আসেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে দেশটির নির্বাচন। এতে বিক্রমাসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঋণ নিশ্চিত করতে এবং আর্থিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বাজেটে ব্যাপক সংস্কার করেছেন।

২০১৮ সাল থেকে শ্রীলঙ্কায় কোনো সাধারণ নির্বাচন হয়নি এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্রমাসিংহে বারবার নির্বাচন বিলম্বিত করেছেন। যদিও পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এখন দেখার বিষয়, সংকটপূর্ণ অর্থনীতি থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য ২০২৪ সালে দেশটির জনগণ কার হাতে দেশের শাসনভার তুলে দেন।

আফ্রিকার সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনও হবে একই মাসে। এবারের ভোটে দেশটির আমূল পরিবর্তন ঘটতে পারে সেখানে। ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার বর্ণবাদ যুগের অবসানের পর প্রথমবারের মতো আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) তার সামগ্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ আফ্রিকানরা অনিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশ্বায়নের স্রোতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নিতে সেখানকার জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে, মে মাসে অনুষ্ঠিব্য আফ্রিকার সবচেয়ে শিল্পোন্নত ও অগ্রসর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচনকে ১৯৯৪ সালে বর্ণবৈষম্যের অবসানের পর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে। আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মধ্যে আলজেরিয়া, বতসোয়ানা, চাদ, কোমোরোস, ঘানা, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সোমালিল্যান্ড, দক্ষিণ সুদান, তিউনিসিয়া ও টোগোতে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। উল্লেখ্য, আফ্রিকা মহাদেশে ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার আসন্ন ভোটে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে (এএনসি) চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হবে। কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছে ক্ষমতায় থেকে কিছু কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে দলটি হয়তো জনগণের ৩৫ শতাংশ ভোটও পাবে না।

এদিকে, নতুন বছরের মার্চেই শেষ হবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ। যদিও দেশটিতে সামরিক আইনের অধীনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবুও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কিয়েভ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত দেশটি সম্ভবত বর্তমান প্রেসিডেন্টকেই ক্ষমতায় দেখতে চাইবে রুশদের বিরুদ্ধে তার লড়াকু মনোভাবের কারণে।

২০২৪ সালে সুদূর লাতিন আমেরিকাতেই বইবে ভোটের হাওয়া। বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নজর কাড়বে মেক্সিকো। দুই নারী প্রার্থী সেখানে শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্রথমবারের মতো দেশটিতে একজন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন আর এই পদে এগিয়ে রয়েছেন ক্লডিয়া শিনবাউম।

বছরের শেষের দিকে পুরো বিশ্বের চোখ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সেদেশের পাশাপাশি বিশ্বরাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে চলবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। মধ্যপ্রাচ্য ও ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকার প্রাধান্য অর্জনের জন্য দেশটি চাইবে একজন শক্তিশালী নেতা। নব্য-বর্ণবাদী মনোভাবে শ্বেতাঙ্গ ভোট আদায়ে এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। আবার তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টায় মরিয়া।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ২০২৪ সালেই সাধারণ নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন। তবে নির্বাচনের তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। দ্বিদলীয় ব্যবস্থার ব্রিটেনকে বলা হয় সংসদীয় গণতন্ত্রের মূলকেন্দ্র। ব্রিটেনের নির্বাচনের ফলাফলের উপর সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটাও নির্ধারিত হবে।

২০২৪ সালে নির্বাচন করা অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলজেরিয়া, বতসোয়ানা, চাদ, কোমোরোস, ঘানা, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সোমালিল্যান্ড, দক্ষিণ সুদান, তিউনিসিয়া এবং টোগো। উন্নয়নশীল এসব দেশে গতিশীল গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে। সেখানে বহু কর্তৃত্ববাদী নেতা গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন। নির্বাচনে কালো টাকা, অস্ত্র ও পেশীশক্তির অবাধ ব্যবহারও হয়ে থাকে। ফলে আফ্রিকার নির্বাচনগুলো আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দিক থেকে বেশ স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত হয়।

নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ড। এসব দেশে নাগরিকগণ নিঃশব্দে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। উন্নয়নশীল দেশের মতো নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনা সেসব দেশে নেই। প্রধানত, বিভিন্ন দলের নীতি ও আদর্শ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভোটারগণ মতামত প্রদান করেন। উদার অর্থনীতি ও সামাজিক কল্যাণের দিক থেকে অগ্রসর দলগুলো দেষগুলোর নির্বাচনে ভালো ফল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৪ বছরজুড়ে ইউরোপে ১০টির বেশি দেশে সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ফিনল্যান্ড, বেলারুশ, পর্তুগাল, ইউক্রেন, স্লোভাকিয়া, লিথুয়ানিয়া, আইসল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া, জর্জিয়া, মলদোভা ও রোমানিয়ার মতো দেশে ক্রমান্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হবে পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানে। যদিও ইরানে রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নীতির বাইরে কারোই যাওয়ার সুযোগ নেই। নেতা নির্বাচিত হয় ক্ষমতাসীন দলের ভেতর থেকেই। তবে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী ইরান আগামী নির্বাচনে একজন শক্তিশালী নেতা নির্বাচিত করবে বলে ধারণা করা যায়।

দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ব্রাজিল ও তুরস্কের মতো কিছু জায়গায় সাধারণ নির্বাচন হবে না তবে স্থানীয় বা পৌরসভা নির্বাচন হবে যেখানে পুরো দেশ অংশগ্রহণ করবে। একইভাবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র ব্লকের পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করবে।

যে দেশগুলো নির্বাচনে যাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকে জি২০ ও জি৭ এর মতো শক্তিশালী জোটের সদস্য। এ কারণে নির্বাচনগুলোতে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও আসতে পারে পরিবর্তন।

যদিও কিছু দেশে নির্বাচন হবে নিছক আনুষ্ঠানিকতা যেগুলোতে রাশিয়ার মতো বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোর ওপর সামান্য বা কোন প্রভাবই থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ বাকি নির্বাচনগুলো জাতীয় নীতি ও নেতৃত্ব গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য এতোগুলো নির্বাচনের মধ্যে কিছু নির্বাচন উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু হলেও কিছু দেশে নির্বাচন হবে নিছক আনুষ্ঠানিকতা। তবে আসন্ন বছরের প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রকে নতুন রূপ দিতে পারে। আবার কোথাও গণতন্ত্রের মোড়কে কর্তৃত্ববাদ অব্যাহত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশ্বের জন্য এই বছরটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। তবে ব্যালট বক্সে এই মহান অগ্রযাত্রা মানে গণতন্ত্রের বিস্ফোরণ নয় বলে মনে করছে পত্রিকাটি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –