• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনা মূল্যে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে- প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২০  

স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনা মূল্যে কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ধনী দেশ, বহুমুখী উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএফআই) উদারতার সঙ্গে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আসেম সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থমন্ত্রীদের ১৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহবান জানান। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগে ধারণ করা এই বক্তব্য প্রচার করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে বিশ্ব শিগগিরই কভিড-১৯-এর কার্যকর ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে। সব দেশের জন্য বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনা মূল্যে এই ভ্যাকসিনের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধনী দেশগুলো ও বহুমুখী উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএফআই) এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য উদারতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।’

আসেম অর্থমন্ত্রীদের এবারের ১৪তম বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কভিড-১৯ মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ আরোগ্য নিশ্চিত করা।

উন্নয়নের পথে এই দুঃসময়ে যেকোনো বাধা অতিক্রমে পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরো জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিচ্ছিন্নতা নয়, বরং পারস্পরিক সহযোগিতাই যেকোনো প্রকার সংকট উত্তরণে সহায়ক হতে পারে। তিনি বলেন, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের পূর্বে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে, বিশেষ করে তাদের বাজারে উন্নয়নশীল দেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

জি-৭, জি-২০, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলো, এমডিবি এবং আইএফআইগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মুক্ত করতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আর্থিক প্রণোদনা বাড়ানো, ছাড়যুক্ত অর্থ ও ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা নিয়ে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারি সব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি, বিশেষত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক মানুষ আয় ও কর্ম হারিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য খাত মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, কাজেই বেশির ভাগ দেশের এসডিজি অর্জন ও কঠোর উপার্জনের সমৃদ্ধি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ একটি টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং কিছু আর্থ-সামাজিক সূচকেও অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

সরকার ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন ২০৪১’ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে দেশটি সঠিক পথেই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে তাঁর সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই মহামারি অগ্রগতির ওপর মারাত্মকভাবে বাধার সৃষ্টি করেছে। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একটি বৃহত্তর প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের বিশদ বিবরণ দিয়ে বলেন, এ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অংশকে সহায়তা করার জন্য ২১.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।

কয়েক মাসের প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পর দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার শুরু করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও কৃষি উৎপাদনের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন, যা ইঙ্গিত দেয় অর্থনীতি এখন টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এডিবি একই সঙ্গে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আইএমএফের উপপরিচালক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আসেমভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জার্মানি, স্পেন, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, চীন, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম) একটি আন্ত সরকারি প্রক্রিয়া, যা ১৯৯৬ সালে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –