• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

`বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্য দৃষ্টান্ত হতে পারে`

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০২২  

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের মতে, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে বাংলাদেশ যে ইতিবাচক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের নীতিনির্ধারকদের চোখ খুলে দিতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (০৭ জুলাই) লন্ডনে রেডব্রিজ টাউন হলের কাউন্সিল চেম্বারে ‘ফ্রম অ্যাশেজ টু প্রসপারিটি : বাংলাদেশ’স জার্নি টুয়ার্ডস ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ শিরোনামের সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

লন্ডন বরো অব রেডব্রিজের মেয়র কার্যালয় এবং সেন্টার ফর আপহোল্ডিং স্পিরিট অব লিবারেশন যৌথভাবে এই সেমিনারটি আয়োজন করে। লন্ডন বরো অব রেডব্রিজের লিডার অব কাউন্সিল কাউন্সিলর জ্যাস অ্যাথওয়াল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সমাপনী বক্তব্য দেন রেডব্রিজের মেয়র কাউন্সিলর থাভাথুরেই জেয়ারানজান।

অনুষ্ঠানে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দা মুনা তাননিম, অ্যাপসেন ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হাসান এমবিই, এবং ইউএনডিপির হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক ড. সেলিম জাহান। 

রেডব্রিজের বর্তমান এবং সাবেক কাউন্সিলররা, একাডেমিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার প্রতিনিধি এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সম্মানিত প্রতিনিধিরা এই সেমিনারে অংশ নেন।

মূল নিবন্ধের শুরুতেই ড. আতিউর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক মুক্তিও নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। এ কারণেই তাঁর নান্দনিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে হাঁটছিল এবং স্বাধীনতার চার বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২৭৩ মার্কিন ডলার হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এই পথ থেকে বিচ্যুত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে দেশ আবার স্বপথে ফিরে আসে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

ড. রহমান জানান, ১৯৭৫ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সাত গুণের বেশি বেড়েছে। আর এই বৃদ্ধির ৭৩ শতাংশই হয়েছে বিগত ১২-১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে। দারিদ্র্য নিরসন এবং বিভিন্ন মানব উন্নয়ন সূচকের বিচারে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধির সুফল সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা প্রান্তিক মানুষের কাছেও পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়ে ড. আতিউর বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে এগুলো ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৪,০০০ মার্কিন ডলারের বেশি হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

এর মধ্যে আছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ‘ডলার সংকট’ মোকাবেলা করা, জনগণকে মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা দেওয়া, জ্বালানির মূল্য ব্যবস্থাপনা, সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা, কর্মসংস্থান, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সচল রাখা, এবং কভিড-১৯ মহামারির প্রভাব সামাল দেওয়া।

ড. সেলিম জাহান তার বক্তব্যে সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের সামাজিক সক্ষমতা এবং দেশটির অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতির কথা তুলে ধরেন। ইকবাল আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে আরো টেকসই করতে বিকেন্দ্রায়িত নগরায়ণের পরামর্শ দেন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –