• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

জানুয়ারিতেই দেশে অক্সফোর্ডের টিকা- স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২০  

যুক্তরাজ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা অনুমোদন পাওয়ার পর বিশ্বজুড়েই যেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নতুন এক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এর ঢেউ পড়েছে বাংলাদেশেও। বিভিন্ন মহলে কৌতূহল বেড়েছে—কবে টিকা পাবে বাংলাদেশ, কী করছে সরকার, কেনই বা সরকার একটি-দুটি মাধ্যমে আটকে আছে। এসব নিয়েই প্রতিবেদকের মুখোমুখি হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি। 

প্রতিবেদক: সরকার কেন অক্সফোর্ডের টিকাই বেছে নিয়েছে, অন্যগুলোর ব্যাপারে আগ্রহ বা উদ্যোগ কম কেন?

মন্ত্রী : অক্সফোর্ডের টিকা আনার ক্ষেত্রে আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর সঙ্গে চুক্তি করেছি। এখানে আমাদের বড় সুযোগ রেখেছি। যদি কোনো কারণে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের টিকা দিতে না পারে তবে তারা পুরো টাকা ফেরত দেবে। এ ছাড়া সেরাম আমাদের যে দামে দিচ্ছে তার চেয়ে কম দামে যদি ভারত সরকারকে দেয়, তবে আমাদের চুক্তির চেয়ে দাম কমিয়ে দিতে হবে। কিন্তু যদি ভারতকে আমাদের চেয়ে বেশি দামে দেয় তা হলে আমরা বেশি দাম দিব না, যে দামে চুক্তি হয়েছে তার মধ্যেই থাকব। সেরামের সঙ্গে চুক্তির আরেকটি কারণ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যে কয়টি টিকা ভালো ফল করছে তাদের মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকাই আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। দামও সবচেয়ে কম। আসবেও তাড়াতাড়ি। পরিবহন ব্যয় ও অন্যান্য খরচও কম। তাপমাত্রা কিংবা সংরক্ষণজনিত সমস্যা বেশি হবে না। এ ছাড়া আমরা ফাইজার, মডার্না, রাশিয়া কিংবা সানোফির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ফাইজার বা মডার্নার টিকা তাপমাত্রার কারণে আমাদের জন্য বাধা হয়ে আছে।

প্রতিবেদক : টিকা কারা আগে পাবে সেই অগ্রাধিকার আপনারা ঠিক করেছেন। কিন্তু দেশের বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কোটা নেই বলে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন। এর জবাব কী?

মন্ত্রী : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে আমরা অগ্রাধিকার ঠিক করেছি। ফ্রন্টলাইনার হিসেবে চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে আমরা আগে টিকার আওতায় আনব। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য কোটা রাখার দরকার হবে না। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ষাটোর্ধ্ব বা বয়স্ক কিংবা অগ্রাধিকারে থাকা কোনো ক্যাটাগরির আওতায় পড়ে যাচ্ছেন।

প্রতিবেদক : টিকা পাওয়ার জন্য বিকল্প চিন্তা বা পরিকল্পনা কি আছে আপনাদের?

মন্ত্রী : আছে। কারণ কোনো কারণে অক্সফোর্ডের টিকা ফেল করলে কিংবা খুব বেশি দেরি হলে তখন আমরা কী করব! সে জন্যই অন্যান্য দিকেও আমাদের নজর রয়েছে।

প্রতিবেদক : দেশে ট্রায়ালের গতি যেন থেমে গেছে। এর কারণ কী?

মন্ত্রী : দেশে ট্রায়ালের জন্য চীনের একটি কম্পানিকে আমরা অনুমোদন দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা করেনি। এখন অন্য কেউ ট্রায়াল করতে চাইলে আমরা বিধি অনুসারে বিবেচনা করব।

প্রতিবেদক : টিকা সংগ্রহে সরকারের পরিকল্পনা কি সঠিক পথে আছে, নাকি কোনো ভুল হচ্ছে?

মন্ত্রী : আমরা টিকার ব্যাপারে দুই মাস আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। যার ধারাবাহিকতায় অন্তত একটি টিকার জন্য চুক্তি করেছি। ভারত ছাড়া আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশই কিন্তু টিকার জন্য ঘুরছে, দৌড়াচ্ছে। কিন্তু আগাম বুকিং দিতে পারছে না। এখন আমরা টিকা দেশে পৌঁছার পরে কিভাবে তা প্রয়োগ হবে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত বৈঠক করছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, মন্ত্রণালয়ে ও অধিদপ্তরে দিন-রাত কাজ চলছে।

প্রতিবেদক : অক্সফোর্ডের আগেই কিংবা সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে অন্য কোনো মাধ্যমে, অন্য কোনো টিকা কেউ দেশে আনার সুযোগ পায়, সেটিকে আপনারা কিভাবে দেখবেন?

মন্ত্রী : বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোনো কার্যকর টিকা বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত টিকা দেশে আনতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাব। কিন্তু আমাদের সরকারেরও অনুমোদন নিতে হবে।

প্রতিবেদক : সার্বিকভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এখন সরকারের অবস্থান কী?

মন্ত্রী : শুরুতে পিপিই-মাস্ক নিয়ে কতই না কাণ্ড ঘটল। আর এখন পিপিই-মাস্ক বিদেশে এক্সপোর্ট করছি। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সমস্যা ছিল। ভেন্টিলেটর নিয়ে হা-হুতাশ ছিল। বিদেশ থেকে কেউ যন্ত্রপাতি দিতে চায়নি। দেশের প্রাইভেট হাসপাতালগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছিল। চিকিৎসকরা ভয়ে ডিউটি করতে চাচ্ছিলেন না—কত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু ধীরে ধীরে সব পাল্টে গেছে। আমরা সারা দেশের হাসপাতালে করোনা ইউনিট, বিভিন্ন এলাকায় আইসোলেশন সেন্টার ও কোয়ারেন্টিন সেন্টার করেছি, ভেন্টিলেটর ও হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা এনেছি, চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ দিয়েছি, হাসপাতালগুলোতে একই সঙ্গে কভিড-ননকভিড সেবা চালু করেছি, প্রাইভেট হাসপাতালগুলো একইভাবে সেবা দিচ্ছে, পরীক্ষা নিয়ে আর মানুষের হা-হুতাশ নেই। শুরুতে একটি ল্যাবে পরীক্ষা হলেও এখন তা ১২০টিতে উন্নীত হয়েছে। আমরা মানুষকে সচেতন করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। গণমাধ্যমও আমাদের সহায়তা করছে।

প্রতিবেদক : কবে নাগাদ দেশে টিকা আসবে, আমাদের দেশের মানুষের শরীরে টিকার ছোঁয়া মিলতে পারে?

মন্ত্রী : আমরা যাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি, সেই সেরাম ইনস্টিটিউট আমাকে জানিয়েছে, আর কোনো ব্যত্যয় না ঘটলে জানুয়ারিতেই আমরা তাদের টিকা দেশে আনতে পারব। আরো আগেও আসতে পারে। অন্যদিকে কোভেক্সের মাধ্যমে যে টিকা আমরা পাব সেগুলো আসতে জুন-জুলাই হয়ে যেতে পারে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –