• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

‘হেফাজত নেতাদের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত করতে চায় বিএনপি-জামায়াত’ 

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০  

রাজনীতির সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে সাক্ষাতকার দিয়েছেন মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। 

প্রতিবেদক : ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছেন কতিপয় হেফাজত নেতা। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটল। মামলা, গ্রেফতারও হচ্ছে। আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে?

শ ম রেজাউল করিম : মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা মানেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা অস্তিত্বে, কল্পনায়, আদর্শে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য বা ছবিতে নয়, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান এবং আদর্শিক বিশ্বাস আমাদের কাছে।

বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি বা ভাস্কর্য দেখলে আমরা, নতুন প্রজন্ম উজ্জীবিত হই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কে কোথায় কী বলল, তাতে আমাদের কিছুই যায়-আসে না। হেফাজত ইসলামের নেতারা কী বলছেন, তাতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হবে বলে আমি মনে করি না।

প্রতিবেদক : সরকারের সমালোচক মহলে প্রচার রয়েছে, সরকার ও হেফাজতের মধ্যে এক প্রকার বোঝাপড়া আছে…

শ ম রেজাউল করিম : (প্রয়াত) আল্লামা শাহ আহমদ শফী কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দেশের পীর-মাশায়েকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গিয়েছিলেন গণভবনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের অনেকগুলো দাবি যৌক্তিক মনে করে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কওমি শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন ইসলামী শিক্ষা পেছনে রেখে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মাদরাসা শিক্ষা এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বড় একটি অংশ। সেজন্য মাদরাসাগুলোকে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। ইসলামী শিক্ষার মূল্যায়নে সরকার নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রায় মাদরাসার উন্নয়নে কাজ চলছে।
মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। আমরা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। এই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক বা গোপন সমঝোতা হতে পারে না। আওয়ামী লীগ কোনোদিন গোপন সমঝোতার রাজনীতি করেনি।
হেফাজতের সঙ্গে কোনো প্রকার সমাঝোতা করেনি আওয়ামী লীগ। এমনকি হেফাজতের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহারও করা হয়নি। সরকার তার নিজস্ব প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে সমাধান করেছে।

সম্প্রতি হেফাজতের মধ্যে জামায়াত ঢুকে গেছে। হেফাজতের নেতৃত্বে কেউ কেউ এসেছেন, যারা ২০ দলীয় জোটেও আছেন। তার মানে ২০ দলীয় জোটের নেতারাও হেফাজতের মধ্যে প্রবেশ করেছেন। কোনো আন্দোলন করে সরকারকে বিব্রত করতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু হেফাজত নিয়ন্ত্রণ করে তারা সরকারকে বিব্রত করতে চাইছে।

প্রতিবেদক : হেফাজতের বর্তমান কমিটি নিয়ে আপত্তি কোথায়?

শ ম রেজাউল করিম : আল্লামা আহমদ শফী পরিষ্কার করে বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু এখন ২০ দলীয় জোট বর্তমানে হেফাজতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
প্রতিবেদক : আল্লামা আহমদ শফী কি রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে ছিলেন?

শ ম রেজাউল করিম : আল্লামা আহমদ শফী কখনোই রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে আসেননি। তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তারা ক্ষমতায় যাওয়া বা অংশীদারিত্বের চেষ্টা করেননি।

তাছাড়া, হেফাজতকে এদেশের মানুষ রাজনৈতিক প্লাটফর্ম থেকে দেখে না। তারা সংসদে যাওয়ার চেষ্টা করেননি, মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেননি। তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনও নেই। এ কারণে হেফাজতকে অরাজনৈতিক দল হিসেবে দেখা যায়।

প্রতিবেদক : তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি এবং হেফাজতকে নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি কী?
শ ম রেজাউল করিম : আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ধারাবাহিকতার মধ্য থেকে বিকশিত একটি রাজনৈতিক ইনস্টিটিউট। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কে কী বলল, তা আওয়ামী লীগ আমলে নেয় না। এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করেছিল পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থা। সে ব্যবস্থা খান খান করে দিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে চিরতরে খতম করতে চেয়েছিল। পারেনি। আওয়ামী লীগ ফিনিক্স পাখির মতো আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের সঙ্গে সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাস্কর্য নিয়ে কে কী বলল, তাতে আওয়ামী লীগ বিব্রত নয়।

প্রতিবেদক : সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে কি-না?

শ ম রেজাউল করিম : সাম্প্রদায়িক শক্তির বিকাশের জন্যই বাংলা ভাইয়ের উত্থান, হলি আর্টিজানের ঘটনার জন্ম দেয়া হয়। সরকার প্রচলিত আইনের মধ্য দিয়ে এই শক্তিকে দমন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েও এমন চেষ্টা হয়েছিল। রাজশাহীর এক সমাবেশে (বিএনপি প্রধান) বেগম খালেদা জিয়া (জামায়াত নেতা, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত) দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বলেছিলেন, তিনি নাকি যুদ্ধাপরাধী নন। সরকার কারও কথা শোনেনি। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলেছে। এখনও চলছে। সুতরাং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিনাশ হবেই।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –