• মঙ্গলবার ৩০ মে ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১৬ ১৪৩০

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৪

সর্বশেষ:
আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির বিশ্বশান্তি রক্ষায় সেবা ও ত্যাগে শীর্ষে বাংলাদেশ জুলাইয়ে পরীক্ষামূলক শুরু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন বাংলাদেশকে শ্রীলংকা বানাতে চায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের তিনবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় এরদোয়ানকে রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন

পঞ্চগড়ে বছরে ৩০ কোটি টাকার সুপারি কেনাবেচা

প্রকাশিত: ২ মে ২০২৩  

 
কয়েক বছর ধরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ব্যাপকহারে সুপারির আবাদ হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে এ জেলার সুপারি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ৩০ কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হচ্ছে। এতে করে দিনদিন সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা।

জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, কেউ পতিত জমিতে, কেউ বাড়ির আঙিনায় আবার কেউ জমির সীমানা নির্ধারণ ঠিক রাখতে সারি সারি করে সুপারি গাছ লাগিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে চা শিল্পের পাশাপাশি মিশ্র চাষ হিসেবে চা বাগানে সুপারি গাছ লাগিয়েছেন চাষিরা। চৈত্র-বৈশাখ মাসে এসব গাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন তারা। ব্যবসায়ীদের অনেকে গ্রামে গ্রামে চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনছেন। এ জেলার সুপারির জাত, স্বাদ, রং ও আকারের কারণে বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি, তাই প্রত্যাশা মতো দামও পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলার তেঁতুলিয়া সদর বাজার, রনচন্ডী বাজার, শালবাহান হাট ও ভজনপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রচুর পরিমাণে সুপারি বেচাকেনা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সুপারি প্রতি পণে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর কয়েকদিন পর প্রতি পণ সুপারি বিক্রি হবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় উঠছে সুপারি চাষ। এক খরচে ৩০ বছরের আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে এ সুপারি চাষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পঞ্চগড়ের সুপারি অন্য এলাকার চেয়ে আকার ও স্বাদে তুলনামূলক ভালো। এ কারণে দেশজুড়ে এখানকার সুপারির চাহিদা ব্যাপক। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায় এই সুপারি। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এখানকার হাটবাজার থেকে সুপারি কিনে নিয়ে যান। সুপারি ঘিরে আয় বেড়েছে বেকার তরুণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও। তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন সুপারি। পরে তা বাজারে এনে বিক্রি করছেন বেশি দামে। গৃহিনীরা সুপারি বেচাকেনায় অংশ নিতে পারছেন, এতে তারাও উপকৃত হচ্ছেন।

কালান্দিগঞ্জ এলাকার সোলেমান আলী বলেন, আমার বাড়িতে ৩০০ সুপারি গাছ রয়েছে। বছরে এসব গাছের সুপারি দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে থাকি। আমার ভাইয়ের একটা সুপারি বাগান রয়েছে, সে আমার চেয়ে বেশি টাকা পেয়ে থাকে। একবার সুপারি গাছ রোপন করলে বিশ থেকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত সুপারি বিক্রি করে চলা যায়। খরচ তেমন নেই বললেই চলে। সামান্য পরিচর্যা করলে এ থেকে বেশ টাকা আয় করা সম্ভব।

স্থানীয় ফিরোজা আক্তার বলেন, আমাদের বাড়িতে ২০-২৫টি সুপারি গাছ আছে। তাতে করে প্রতি বছর বেশ ভালো টাকা পাই। এসব সুপারি বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের কাপড় কিনে দিতে পারি, পড়ালেখার খরচও দিতে পারি। আরও চারা করেছি, সামনের বর্ষায় লাগাবো।

সুপারি ব্যবসায়ী আসমত ও রবিউল ইসলাম জানান, এ এলাকার সুপারির চাহিদা সারা দেশেই রয়েছে। যশোর, ঢাকা, কুমিল্লা, সৈয়দপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হয়ে থাকে এ সুপারি। সুপারির বিভিন্ন সাইজ হিসেবে বিভিন্ন দাম হয়ে থাকে। বর্তমানে বড় আকারের সুপারি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা এবং মাঝারি আকারের সুপারি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে অন্য ফসলের মতো সুপারি গাছের তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না বা কিংবা কীটনাশক ও সেচের ব্যবহার হয় না। এ কারণে সুপারি চাষে লাভ বেশি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যেষ্ঠ এই তিন মাস সুপারির মৌসুম। এ সময়ে একদিকে গাছে সুপারি পাকতে শুরু করে। অপর দিকে সুপারি গাছে নতুন করে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়। এক একটি গাছে সুপারির ফলন আসে ৪ থেকে ৫ পণ অর্থাৎ ৮০ থেকে ১০০ হালি। এপ্রিল থেকে শুরু হয় সুপারি আহরণ। জুন মাস পর্যন্ত চলে সুপারি বেচাকেনা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, পঞ্চগড়ে ৬৫০ হেক্টর জমিতে সুপারি আবাদ হচ্ছে। এসব আবাদ থেকে বছরে এ জেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা সুপারি বেচাকেনা হচ্ছে। সুপারি আবাদে এ জেলার অর্থনীতিতে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে। সুপারি চাষে বাড়তি ঝামেলা ও খরচ নেই। একবার চাষ করতে পারলে কয়েক বছর এক আবাদেই অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় হতে সুপারি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –