• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

সর্বশেষ:
আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৪ ঘণ্টায় র‍্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ২৯০। মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা: ছয়জন রিমান্ডে।

তেঁতুলিয়ায় অনিশ্চিত ১২৪২ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২৩  

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার এক হাজার ২৪২ শিক্ষার্থীর। এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অকৃতকার্য ও জিপিএ ৩ দশমিক ৫-এর নিচে ফলাফলে এমন আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিক মহল। তারা মনে করছেন, এমন ফলাফলে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে কাঙ্খিত কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।

জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাইপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বোয়ালমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শালবাহান দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, হারাদিঘী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও গিটালগছ উচ্চ বিদ্যালয়ে এবারের পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে। এসব স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের মানবিক বিভাগ, গণিত, ইংরেজি ও বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থীরা ফলাফল খারাপ করেছে।

২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। পঞ্চগড় জেলায় পাসের হার ৭৪.৯৫ শতাংশ। তেঁতুলিয়ায় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ উপজেলায় ১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে মাত্র ১ হাজার ৩৪৫ জন। সব থেকে ফলাফল খারাপ হয়েছে মানবিক বিভাগে। এ বিভাগ থেকে ১ হাজার ২২৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৮২৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪০৫ জন। সর্বমোট অকৃতকার্য হয়েছে ৪৬২ শিক্ষার্থী।

মানবিক বিভাগ থেকে একজন নারী শিক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ-৫। জিপিএ-৫-সহ ৩ দশমিক ৫ অর্জন করেছে ১৩৮ জন। ৩ দশমিক ৫-এর নিচে রয়েছে ৬৮৬ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগে ৫৬২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫১০ জন। এদের মধ্যে জিপিএ ৫-সহ ৩.৫ পেয়েছে ৪২৩ শিক্ষার্থী। এ বিভাগে জিপিএ-৩ দশমিক ৫-এর নিচে ৮৭ জন এবং ফেল করেছে ৫২ জন। বাণিজ্য বিভাগে ১৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১১ জন। অকৃতকার্য ৫ জন। জিপিএ ৩ দশমিক ৫-এর নিচে অর্জন করেছে ৭ জন।

সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৩ দশমিক ৫-এর নিচে পাস করায় উচ্চশিক্ষা যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তেমনি এসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কারিকুলাম অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৫ এর নিচে পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ফেল করা শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন হয়ে পরেরবার পরীক্ষা দিতে হবে। যারা ৩ দশমিক ৫-এর নিচে পেয়েছে তাদের উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভালো রেজাল্ট করতে হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা সচেতনরা। এমন ফলাফলের জন্য শিক্ষকমহল অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের দায়ী করেছেন। অপরদিকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাও স্কুলে শিক্ষকরা ঠিকমতো পড়াচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন।

তথ্যমতে, পঞ্চগড়ে এবার ১৪ হাজার ৬১০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ১০ হাজার ৯৫০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯৮ জন। এসব ফলাফলের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো করেছে। ৭ হাজার ৩৫৮ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৫ হাজার ৯১২ জন। মেয়েদের পাসের হার ৮০.৩৫%। অপর দিকে ৭ হাজার ২৫২ জন ছেলে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৫ হাজার ৩৮ জন। ছেলেদের পাসের হার ৬৯.৪৭%।

সিপাইপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে ৫৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে মাত্র ২৯ জন। মুঠোফোনে এই স্কুলে কতজন পরীক্ষা দিয়েছিল জানতে চাইলে তা বলতে পারেননি ইংরেজির শিক্ষক নুরুল ইসলাম। 

স্কুলের পাঠদান দুর্বল ও শিক্ষকদের দায়িত্বের অবহেলার কারণেই ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটির ফলাফল খারাপ হয়েছে বলে স্থানীয় ও অভিভাবকদের অভিযোগ। তারা বলছেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নেন না। দায়বদ্ধতা নেই। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, এখানকার শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে আসতে চায় না। অর্থ উপার্জনে কেউ দোকানে, কেউ শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। অভিভাবকরাও সচেতন নয়।

কথা হয় বোয়ালমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। তার স্কুলে ৪২ জন ছাত্রী পরীক্ষায় ফরম পূরণ করলেও পরীক্ষা দেয় মাত্র ৮ জন। তার মধ্যে পাস করে ৪ জন। বাকি ৩৪ জনই দেননি পরীক্ষা। এর কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জানান, এ এলাকায় বাল্যবিয়ের কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ঝরে যাচ্ছে। ৪২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ জন বাল্যবিয়ের কারণে পরীক্ষা দেয়নি। 

হারাদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, ঠিকমতো ক্লাসে আসে না শিক্ষার্থীরা। প্রতি ক্লাসে ৪০ শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই তুলনায় শিক্ষক কম। অনেক বিদ্যালয়ে শাখা নেই। শাখা খুলতে নানা জটিলতা। শিক্ষার্থীরা টিফিনের পর ক্লাসে আসে না। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নানা কাজে ব্যস্ত রাখে। শিক্ষার্থীরা আয় উপার্জনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। অভিভাবক মহল সচেতন নন। এসব কারণেই ফলাফল খারাপ হচ্ছে। একই কথা বলেন পরীক্ষায় খারাপ করা অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকরাও।

পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন প্রধান বলেন, ভালো কলেজে ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে জিপিএ ৪ থেকে ৫ পেতে হয়। প্রতিযোগিতা করে টিকতে হয়। তেঁতুলিয়া উপজেলায় পরীক্ষার এমন ফলাফলের ভিত্তিতে বলা যায় অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতই অনিশ্চিত। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলোতে ম্যানেজমেন্ট, কমিটি, শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকের সচেতনতার অভাব। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিনদিন লেখাপড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ভালো প্রতিষ্ঠান তো চাপের মধ্যে থাকে, সেক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলগুলোতে তেমন চাপ নেই। যার কারণে রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে।

আগে তো গ্রাম অঞ্চলে স্কুলগুলোতে ভালো রেজাল্ট হতো। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষকদের মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। এর থেকে উত্তরণ পেতে হলে কঠোর নজরদারি করতে হবে। প্রত্যেক স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হয়েছে এটা ঠিক। তবে যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাদের জন্য বিশেষ ক্লাসের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ফলাফল ভালো করার জন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। আমরা সব স্কুল এবং মাদরাসা শিক্ষক অভিভাবকদের ডাকব। তাদের নিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামীতে ফলাফল যাতে আরও ভালো হয় তার জন্য সব উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –