• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় পঞ্চগড়ের পাথর শ্রমিকদের কষ্টের জীবন

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪  

পঞ্চগড়ে টানা তিন সপ্তাহ ধরে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা বিরাজ করছে। বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে বাতাশ আর ঘন কুয়াশায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গত দুই দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এরকম বৈরী আবহাওয়াতে নদী কেন্দ্রীক শ্রমজীবীদের কষ্ট বেড়ে গেছে। তীব্র ঠাণ্ডাতেও নদীর জলে নেমে তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে। 

পাথর ও বালি শ্রমিকরা বলছেন, পানিতে হাত দিলেই বরফের মতো ঠাণ্ডা লাগে। অথচ নদীতে শরীর ভিজিয়ে পাথর বালি উত্তোলন করতে হচ্ছে তাদের। এই পাথর বালি সারা দেশের রাস্তা ঘাট, সেতু, ভবন সহ নানা রকম নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৪৬টি নদ-নদী। এরমধ্যে বেশ কিছু নদী থেকে পাথর বালি উত্তোলন করা হয়। আর এই কাজে জড়িয়ে আছে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের জীবন জীবিকা। শ্রমিকরা বলছেন, করোতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, তালমা, চাওয়াই সহ অন্যান্য নদীতে খুব সকালেই শ্রমিকরা নেমে পড়েন। সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথর বালি উত্তোলনের কাজ করেন। তাতে আয় ভালো হয়। সেই আয় দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু বর্তমানে তীব্র ঠাণ্ডার কারণে সময় মতো কাজে যেতে পারছে না তারা। সারাদিন নদীর গভীর থেকে পাথর বালি আহরণ করে আগে আয় হতো ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা। বর্তমানে রোজগার করেন ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা। অতিমূল্যের বাজারে অর্ধ খালি ব্যাগ নিয়েই তাদের ফিরতে হয় বাড়ি। 
 
সদর উপজেলার মীড়গড় এলাকার পাথর শ্রমিক নঈমুল ইসলাম জানান, নদীতে কাজ করে যা কামাই করি তাই দিয়ে সংসার চলে। বর্তমানে ঠাণ্ডার কারণে নদীতে নামতে কষ্ট হয়। পানি বরফের মতো লাগে। কোথাও হাটু পানি কোথাও কোমর আবার কোথাও এক বুক পানিতে নেমে পাথর বালি উত্তোলন করতে হয়। খুব ঠাণ্ডা লাগে। কিন্তু কি করবো । সংসার চালাতে হয়। 

আহমদ নগর বালি শ্রমিক এলাকার হাসিবুল ইসলাম জানান, যা আয় তাতে খাবারও ঠিকমতো হয় না। ছেলে মেয়েদের শীতের কাপড় চোপর দিতে পারিনি। কিনবো কিভাবে। আমাদেরকে কেউ কাপড় চোপড় দেয় না । যাদের কেনার সামর্থ্য আছে সাহায্য সহযোগিতা তারাই পায়। 
 
এদিকে, তীব্র এই শীতে গ্রামীণ মানুষের ঠাণ্ডা নিবারণের একমাত্র অবলম্বন আগুন পোহানো। তারা খরকুটো বা কাঠের চেলা জ্বালিয়ে শীত নিবারনের জন্য আগুনের উত্তাপ নেন। কিন্তু আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে ৩৩ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন এক জন। 
 
জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলায় প্রায় দুই লাখ দরীদ্র এবং ছিন্নমূল মানুষ রয়েছেন। যাদের শীতের কাপড়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে ৩৩ হাজার কম্বল বিতরণ করেছেন। 
 
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে। আরও কয়েকদিন তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে থাকবে এই জেলা । 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –