• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলামে দৃষ্টিতে আমাদের স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২১  

২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকাল পালন করছি। এই দেশকে পাকিস্তানের শাসকদের হাত থেকে মুক্তি করার জন্য স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা গনহত্যা কিংবা নারীর সম্ভ্রম হরন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মত জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। বর্তমান ও পুরোনো বছরের শোষন-শাসন অপমানের শিকার বাঙালী জনগন তখন ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ হূদয়ে ধারন করে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য। জানা অজানা বহু মানুষ হারিয়ে গেছেন ফিরে না আসার দেশে। বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেন তারা শহিদ। কারন দেশের জন্য, মজলুম জনতার দাবি আদায়ের স্বার্থে লড়াই করা ইসলামি নীতিরই নামান্তর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর পথে জীবন দেন তাদের মৃত বলোনা। বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারনা। (সুরা বাকারা,আয়াত : ১৫৪)

এদিকে রাষ্ট্র রক্ষার কাজে নিয়োজিত লোকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে রাসুল (স) বলেছেন, রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুর চেয়ে অতি উত্তম। অন্য হাদিসে রাসুল (স) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুর পর তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারেনা, তবে ঐ ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় মৃতবরন করে। তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এবং কবরের প্রশ্নোত্তর থেকে সে মুক্তি পাবে। (তিরমিজি, আবুদাউদ) ইসলাম কোন পরাধীনতাকে পছন্দ করেনা। মহান আল্লাহ বলেন, যে মুক্ত করে তাদের গুরুভার হতে ও শৃঙ্খল হতে যা তাদের ওপর ছিল। সুতারং যারা তার প্রতি বিশ্বাস করে তাকে সন্মান প্রদর্শন করে, তাকে সাহায্য-সহযোগীতা করে এবং যে নুর তার সঙ্গে অবতীর্ন হয়েছে এর অনুসরন করে তারাই হলো সফলকাম। (সুরা আরাফ,আয়াত : ১৫৭)

দেশপ্রেমিকরা মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এবং যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন ও আমাদের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছেন। প্রত্যেক মানুষ তার ভূমিষ্ট স্থান এবং তার লালন-পালনের স্থানটিকে সহজাতভাবেই ভালবাসে। কেননা জন্মভূমিকে ভালবাসা একজন নাগরিকের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব। তাছাড়া এটা রাসুল (স)-এর আদর্শ। প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স) মক্কা ত্যাগে তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরছিল। তিনি বলেছিলেন, হে মক্কা আমি তোমাকে ভালবাসি। কাফেররা যদি আমাকে বের করে না দিত, তাহলে তোমাকে ত্যাগ করতাম না। আবার যখন মদিনা শরীফ থেকে অন্যত্র বের হতেন, তখন তার মন কাঁদত। সফর শেষে ফিরে যখন উহুদ পাহাড় দেখতেন, তখন খুশি হয়ে যেতেন এবং বলতেন এই উহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালবাসি। (বুখারী শরীফ :২/৫৩৯,ইবনে কাছীর: ৩/৪০৪)

লেখক :মো. আবু তালহা তারীফ
খতিব ও ইসলাম বিষয়ক গবেষক

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –