• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পবিত্রতায় ঢাকা ঈদুল ফিতর 

প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০২৪  

ঈদ শব্দটি আরবি ‘আওদুন’ থেকে এসেছে- যার অর্থ ফিরে আসা, বারবার আসা। ধর্মীয় পরিভাষায় ঈদ বলতে আমরা পবিত্রতার মোড়কে ঢাকা উৎসব বুঝি। ফিতর অর্থ ফাটল, ভাঙন, ভাঙা ইত্যাদি। এক কথায় ঈদুল ফিতর অর্থ হলো- রোজা ভাঙার উৎসব। সুদীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর নির্দেশে আমরা শাওয়ালের প্রথম দিন রোজা ভঙ্গ করি, তাই এ দিনটির নাম ঈদুল ফিতর।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিন সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই দিনটিতে তোমরা রোজা রেখো না। এদিন তোমাদের জন্য আনন্দ-উৎসবের দিন। খাওয়া আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ-উৎসব করার দিন। আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।’ মুসনাদে আহমদ, ইবনু হিববান।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলেন। তিনি মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসী পারসিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বসন্তের পূর্ণিমা রাতে ‘মেহেরজান’ আর হেমন্তের পূর্ণিমা রাতে ‘নওরোজ’ নামক উৎসবে এমনসব আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠত; যা কোনো সুস্থ বিবেকবান লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তিনি মদিনাবাসীকে ডেকে বললেন, ‘আল্লাহ এ দুটি দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন তোমাদের আনন্দ উৎসব পালনের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি হলো ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে এ দুটি ঈদ বা উৎসব পালন করবে।’ আবু দাউদ, নাসায়ি।সেই থেকে মুসলিম উম্মাহ যথারীতি প্রতি বছর ঈদুল ফিতর উদযাপন করে আসছে। এ হিসাবে এ বছরও মহান রব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আমরা পবিত্র ঈদুল ফিতর আদায় করব। ঈদ উদযাপন করব ইসলামী শরিয়তের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদিনরা যেভাবে ঈদ উদযাপন করেছেন, আমরাও তাঁদের মতো ঈদ উৎসব করব ইনশা আল্লাহ।

ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেছেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের দিন (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।’ বুখারি। ঈদের নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।’-ইমাম মালিক।

ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কিছু আহার করার কথা হাদিসে আছে। বিশেষ করে হাদিসে খেজুর বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না।’ বুখারি। ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতি ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়া মুস্তাহাব।’ আল মুগনি। ঈদের আরেকটি করণীয় হলো, এ দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা। হজরত জাবির (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সুন্দর জোব্বা ছিল, যা তিনি দুই ঈদে ও জুমার দিনে পরিধান করতেন।’ বায়হাকি।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ঈদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শরিয়তে সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে ওয়াজিব করা হয়েছে; যা একদিকে ত্রুটিযুক্ত রোজাকে পবিত্র করে, অন্যদিকে এর দ্বারা অসহায়-নিঃস্বদের প্রয়োজন কিছুটা হলেও পূরণ হয়।’

আল্লাহর হুকুম পালন করার মাঝেই একজন সিয়াম পালনকারীর আনন্দ। সেই হুকুম নামাজ ও সিজদার মাধ্যমে হলে আনন্দের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। আমরা ঈদের দিন আনন্দ শুরু করব আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। ঈদুল ফিতরের নামাজ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘নিশ্চয় সে ব্যক্তি সাফল্য অর্জন করেছে, যে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জন করেছে এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করেছে। অতঃপর নামাজ আদায় করেছে।’ [সুরা আ’লা : ১৪-১৫]। উল্লিখিত আয়াতে নামাজ আদায় করা দ্বারা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। (আহকামুল  কোরআন) অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপনি আপনার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং  কোরবানি করুন।’ [সুরা কাওছার : ২]।হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন : এ আয়াতে ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ দান করা হয়েছে। দ্বিতীয় হিজরি থেকে মুসলিম উম্মাহ যথারীতি প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন। তবে এই ঈদ, আনন্দ, উৎসব পালন করতে হবে শরিয়তের নির্দেশিত পথে। খেয়াল রাখতে হবে মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদগণ কীভাবে ঈদ পালন করেছেন। আমরাও তাদের মতো ঈদ, আনন্দ উৎসব পালন করব। তাহলে কাক্সিক্ষত আনন্দ পাব ইনশাআল্লাহ।

♦ লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –