• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের সহজ উপায়

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০  

জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০১৩)

আলোচ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না। বিপরীতে যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) অপর হাদিসে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনে যারা বসবাস করছে তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)

অনুগ্রহ লাভের সহজ উপায়

উল্লিখিত হাদিসদ্বয়ের আলোকে মুহাদ্দিসরা বলেন, আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের সহজ উপায় হলো সৃষ্টি জগতের প্রতি দয়ার্দ্র আচরণ করা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা। সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ও অনুগ্রহ মহান স্রষ্টা আল্লাহর ভালোবাসা ও অনুগ্রহকে ত্বরান্বিত করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত ইহসানকারীদের (অনুগ্রহশীল) নিকটবর্তী।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)

মানবহৃদয়ে দয়া-মায়া যেমন হয়

মানবহৃদয়ে মায়া-দয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক. বিশেষ অনুগ্রহ—যা আল্লাহ তার বিশেষ বান্দাদের দান করে থাকেন। বিশেষ অনুগ্রহস্বরূপ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহ কোমলহৃদয় করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের কোমলহৃদয় হয়েছিলেন। যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরহৃদয় হতেন তবে তারা আপনার পাশ থেকে সরে যেত।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

দুই. সাধারণ অনুগ্রহ—যা আল্লাহর সব সৃষ্টি লাভ করে থাকে। এমনকি অবিশ্বাসীরাও এই শ্রেণির অনুগ্রহের অধিকারী হয়। যেমন—পিতা হিসেবে সন্তানের প্রতি স্নেহ ও মমতা অনুভব। শিশুপুত্র ইবরাহিম মারা গেলে মহানবী (সা.) কেঁদেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘এটা হচ্ছে রহমত (মমতা), যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের অন্তরে সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবলমাত্র দয়ার্দ্রদেরই দয়া করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৪৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, এক গ্রাম্য ব্যক্তি তার ১০ সন্তানের মধ্যে একজনকে চুমু খেতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার তাতে কী করার আছে যদি আল্লাহ তোমার অন্তর থেকে দয়া-মায়া একান্তই উঠিয়ে নেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৮)

জীবজন্তুর প্রতিও অনুগ্রহ

মানুষই কেবল মানুষের অনুগ্রহ লাভের যোগ্য নয়, বরং বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী, পশু-পাখির প্রতি দয়াশীল আচরণ করতে হবে। যেমন—একাধিক হাদিসে এসেছে, একজন দেহপসারিণী বিড়ালকে পানি পান করিয়ে ক্ষমা লাভ করে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে। অন্যদিকে অপর এক নারীকে শাস্তি দেওয়া হবে এ কারণে যে, সে একটি বিড়াল বেঁধে রেখেছিল, সে বিড়ালটিকে না খাওয়াত, না পান করাত, তাকে ছেড়েও দিত না যে জমিন থেকে খানা খাবে; এমনকি বিড়ালটি এ অবস্থায় মারা যায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৬৫)

স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে সৃষ্টির প্রতি দয়া নয়

আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করতে বলেছেন। তবে তা অবশ্যই তাঁর আনুগত্যের শর্তে। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কারো প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চোখ অশ্রু ঝরায়, হৃদয় শোকার্ত হয়, তবে আমরা শুধু তা-ই বলব যাতে আমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হয়। হে ইবরাহিম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩০৩)

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –