• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

কুড়িগ্রামে মার্কেটে আগুন, কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২১  

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নাখারগঞ্জ বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২টি দোকান ও বাড়িঘর পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

রোববার (২৩ মে) সন্ধ্যার দিকে নাখারগঞ্জ বাজারে থাকা একটি জুয়েলারি দোকান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে নাখারগঞ্জ বাজারে থাকা মোরশেদ জুয়েলার্সে প্রথমে আগুনের ঘটনা ঘটে। পরে আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের দোকানগুলোতে আগুন ধরে যায়। এসময় স্থানীয়রা নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিস অফিসে খবর দিলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাখারগঞ্জ বাজারের কাস্টম মার্কেটের আরাফাত ট্রেডার্স নামের কীটনাশক ও সারের দোকান, ওবায়দুল ভেটেরিনারি, মোরশেদ জুয়েলার্স, পূর্নিমা জুয়েলার্স, গালামালের দোকান ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানসহ মোট ১২টি দোকান পুড়ে যায়। এসময় বাজারে থাকা অনান্য দোকানের মালামাল সরিয়ে নেয়ার সময় অনেক দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটের মালিক মোস্তাফিজার রহমানের বাড়ি সমস্ত জিনিসপত্রও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাড়িসহ মার্কেটের প্রায় ১২টি দোকানসহ মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সবমিলে কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।’

আরাফাত ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রশিদ জানান, কিস্তির টাকায় দোকানের মালামাল তুলেছেন। ৮ লাখ টাকার জিনিস এনে দোকানে রাখার পরপরই আগুনে সব পুড়ে যাওয়ায় এখন তিনি নিঃস্ব।

ওবায়দুল ভেটেরিনারির মালিক ওবায়দুল মিয়া জানান, অগ্নিকাণ্ডে তার দোকানের প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

মোরশেদ জুয়েলার্সের মালিক আব্দুল লতিফ জানান, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তার ছোট মেয়ে মেডিকেলে ফাইনাল ইয়ারে পড়েন এবং আরেক মেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ছোট মেয়ে পড়েন নবম শ্রেণিতে। এই দোকানের আয় থেকে চলে তাদের সংসার ও ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ। এখন তিনি নিঃস্ব। এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

স্থানীয় আইটি পাঠশালার চেয়ারম্যান কুমার বিশ্বজিৎ বর্মণ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই এতটাই নিঃস্ব হয়ে পড়লেন যে তারা দাঁড়ানোর মতো শক্তি খুঁজে পাবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোরশেদ জুয়েলার্সের মালিক আব্দুল লতিফের দুই মেয়ে। এক মেয়ে মেডিকেলে ও অন্যজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। দোকানের আয় দিয়ে তাদের পড়ালেখা চলতো। এখন পড়ালেখা চলবে কি করে? আরাফাত ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রশিদের অনেক ঋণ রয়েছে। এখন তার পক্ষে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।’

নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার ইমন মিয়া বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। রাত পর্যন্ত আমাদের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখন বলতে পারছি না। পরে বলতে পারব।’

এ বিষয়ে রামখানা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম বলেন, ‘বিষয়টি ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানানো হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।’

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –