• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বৈশ্বিক স্বার্থে দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২১  

মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্ব মানবতার অভিন্ন স্বার্থে দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং যোগাযোগকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছি।’

শুক্রবার (১২ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে ইউনেসকোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্থাটির সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার সরকার সহিষ্ণুতা ও মর্যাদা সঞ্চারিত করার মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ইউনেসকোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমাদের সাফল্য উদযাপনের এক অনন্য মুহূর্ত। এছাড়াও এটি শতবর্ষ উদযাপনের আগে পরবর্তী ২৫ বছরে সংস্থার কার্যকলাপগুলো পুনর্বিবেচনা এবং আত্মসমালোচনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।

তিনি বলেন, ইউনেসকোর নীতির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার ১৯৭২ সালে আমাদের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভের মাধমে প্রতিফলিত। আমরা এ সংগঠনকে বিশ্বশান্তি ও সম্মিলিত সমৃদ্ধি জোরদারের জন্য অন্যতম কার্যকর মঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্ব শান্তি উদ্যোগের অগ্রভাগে থাকে। শীর্ষ অবদানকারী হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় আমাদের অংশগ্রহণ এমনই একটি ঘটনা।

শেখ হাসিনা বলেন, বৃত্তি প্রদান, লিঙ্গ-সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, আইসিটি শিক্ষার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ প্রচুর। আমাদের সরকার স্কুলে বছরের শুরুতে প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে ৪০ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনা আইসিটি ভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করছে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষা মহাপরিকল্পনায় আইসিটি চালু করেছি, এর আওতায় প্রায় ৮৩ হাজার স্কুলকে আইসিটি ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে এবং ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৬ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেসকোর এ ঐতিহাসিক ৭৫তম বার্ষিকীতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সংস্থাটির মহাপরিচালককে অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউনেসকো বিশ্বের জন্য আশা ও শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ একইসময়ে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন শান্তির প্রবক্তা এবং মানবতায় দৃঢ় বিশ্বাসী। মানুষের অদম্য কর্মস্পৃহা, অসম্ভবকে সম্ভব করার ও অনতিক্রম্য বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতায় তার (বঙ্গবন্ধুর) গভীর আস্থা ইউনেসকোর চেতনা অনুরণিত করে।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’র জন্য ইউনেসকো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা স্মরণ করে বলেন, এ আন্তর্জাতিক পুরস্কার অবশ্যই সৃজনশীল উদ্যোক্তা বিকাশে উৎসাহ যোগাবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ইউনেসকো জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে একটি প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করায় মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে স্থান দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। জনগণের নেতাকে এ ধরণের গভীর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমি ইউনেসকোকে ধন্যবাদ জানাই।

মহামারি বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি আমাদের উদ্ভাবনী কাজ এবং গতির মাধ্যমে বেঁচে থাকতেও শিখিয়েছে।

এ সময় তিনি মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে থাকা বিশ্বের সামনে চারটি পরামর্শ তুলে ধরে বলেন, আসুন আমাদের বিশ্ব মানবতার অভিন্ন কল্যাণের জন্য দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এ মুহূর্তটি কাজে লাগাই।

শেখ হাসিনা তার প্রথম পরামর্শে মহামারি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে উল্লেখ করে বলেন, পুনরুদ্ধারের জন্য, ডিজিটাল সরঞ্জাম ও পরিষেবা, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে আমাদের একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা দরকার।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, যে প্রযুক্তি-সহায়ক অর্থপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ তৈরির জন্য অবশ্যই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়তে হবে।

তৃতীয় পরামর্শে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে অবশ্যই একটি ‘বৈশ্বিক গণপণ্য’ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই সবার কাছে, বিশেষ করে, বিশ্বব্যাপী ছাত্র ও শিক্ষকদের কাছে টিকা লাভের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান চতুর্থ তথা শেষ পরামর্শে বলেন, আমাদের জনগণের কল্যাণের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তরকে গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –