• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মেয়াদ বাড়ছে আরো চার রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২২  

মেয়াদ বাড়ছে আরো চার রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের                        
মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও দেশে আরো চারটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এই বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মেয়াদ বাড়তে যাওয়া কেন্দ্রগুলো হলো—পাওয়ার প্যাক মুতিয়ারার কেরানীগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, অ্যাকর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের চট্টগ্রাম জুলদায় ১০০ মেগাওয়াট, সিনহা পাওয়ারের চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট এবং নর্দান পাওয়ারের রাজশাহী কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। পাঁচ বছর মেয়াদি এই চারটি কেন্দ্র ২০১০ সালে উৎপাদনে আসে। এরপর তাদের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উদ্যোক্তারা পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ বা ‘বিদ্যুৎ না কিনলে অর্থ পরিশোধ নয়’ ভিত্তিতে চারটি কেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একই সঙ্গে আগে এ বেসরকারি কেন্দ্রগুলো যে ক্যাপাসিটি চার্জ পেত, তা নতুন প্রস্তাবে বাতিল করা হয়েছে। তবে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের পরিবর্তে মেরামত ও পরিচালন ব্যয় (ফিক্সড ও ভ্যারিয়েবল) বাবদ খরচ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে, যা ক্যাপাসিটি পেমেন্টের হারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও অবকাঠামো, সংরক্ষণ ও পরিচালন ব্যয় বাবদ নির্ধারিত পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ পান কেন্দ্র মালিকরা। ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ গত ১২ বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ চারটি কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বর্ধিত মেয়াদের মূল্যহার অনুমোদনের জন্য গত সপ্তাহে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আগামী সভায় এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এর আগে গত মার্চে ফার্নেস তেলভিত্তিক (এইচএফও) আরো পাঁচটি কেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ছিল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উদ্বৃত্ত উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও  জ্বালানিসংকটের কারণে চাহিদানুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না কেন্দ্রগুলো। ডলারসংকটের কারণে তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফার্নেস তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অপেক্ষাকৃত কম এমন যুক্তিতে নতুন কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথচ কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে উৎপাদন খরচ এর চেয়ে আরো কম হলেও সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি উৎপাদন করতে পারছে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। চলতি বছরে এবং আগামী বছরে কয়লাভিত্তিক আরো দুই-তিনটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সংরক্ষণ ও পরিচালন ব্যয়সহ রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য আরো ক্ষতিকর হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর পুঞ্জীভূত পাওনার পরিমাণ ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার। গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতে ভতু‌র্কির অর্থ ছাড় করছে না সরকার। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া জমছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পিডিবি এ নিয়ে অনেক দিন ধরে চিঠি চালাচালি-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাবে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত্ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিদু্যত্ উৎপাদন ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদু্যত্কেন্দ্রগুলো ধাপে ধাপে বন্ধ করা হচ্ছে। ডিজেলভিত্তিক মোট ৪০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ১৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি এবং গ্যাসভিত্তিক মোট ৪৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি মিলে মোট ১ হাজার ১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। তবে বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা, দাম কম হওয়ায় কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ শর্তে বাড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফার্নেসভিত্তিক ৪৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি এবং গ্যাসভিত্তিক ২১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ এই শর্তে বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, সেচ ও গরম মৌসুম বিবেচনায় জরুরি প্রয়োজনে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো দরকার।
#দৈনিক ইত্তেফাক।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –