• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বিএনপিরই কিছু নেতা খালেদার মুক্তি চান না

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৮  

পেশার প্রয়োজনে চট্টগ্রামের পথে সোনার বাংলা ট্রেনে দেখা হয় এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সাদরে আমন্ত্রণ জানান নিজ রুমে বসে আলাপে। কথা হয় একান্তে। নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয় তার সঙ্গে। আলাপচারিতায় উঠে আসে বিএনপি, খালেদা জিয়া ও ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে। কখনো অফ দ্যা রেকর্ড, কখনোবা অন দ্যা রেকর্ডে কথা হয় খোলামেলা।

প্রতিবেদক: আপনিতো রেলমন্ত্রী ছিলেন। সে সময়ের অভিজ্ঞতা যদি বলতেন।

অলি: আমি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলাম। তখন রেলওয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। এই সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি। এখন রেলের সেবার মান দেখতে মূলত রেলে ভ্রমন করছি।

প্রতিবেদক: গত এক দশক বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে কিভাবে দেখছেন?

অলি: বিএনপির কিছু নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তি চান না বলে আমার মনে হয়। শুধু তাই নয়, তারেক রহমান দেশে ফিরে আসুক তাতেও তাদের আপত্তি। সবকিছুতেই তাদের খবরদারি পছন্দ।

ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং বিশ দলে নিজের ভূমিকা প্রসঙ্গে অলি বলেন, এমন এক সময়ে আমরা ঐক্যফ্রন্ট করেছি, ভোট যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য, তা যথেষ্ট সময় নয়। তাছাড়া কিছু ‘রাজনৈতিক বিধবা’ যারা কোনো দিন ভোটে জয়ী হতে পারেননি, তারা ঐক্যফ্রন্টে এসে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিল করতে চায়। তবুও আমি মনে করি, যেভাবে ৭১' এ আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, ঠিক তেমনিভাবে আরেকটি ভোট যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। জনগণ যদি রাস্তায় নেমে আসে এবং ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়, যার অধীনেই ভোট হোক না কেন, ফলাফল হাইজ্যাক করতে কেউই সাহস করবে না। সুতরাং রাজপথে থাকার বিকল্প নেই।

প্রতিবেদক: গত তিন দশকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কি বলবেন?

অলি: রাজনীতিবিদদের সততা ও দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে। বেশিরভাগই দুর্নীতিগ্রস্থ। এমনকি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক লুট করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে অর্থনীতি বড় ধরনের ধ্বংসের মুখে পড়বে। আজকের রাজা কালকে পথের ফকিরে পরিণত হবে। ২০১২ সালে যখন আমার নির্বাচনী এলাকায় যাই, আমার নামে মিথ্যা মামলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সামনে গাড়ি পোড়ানোসহ নানা অভিযোগে মামলা হয়, আমার বিরুদ্ধে। জামিন নিতে গেলে আমাকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ, সেদিন জীবনবাজি রেখে আমাকে ভালোবেসে রাস্তায় নেমে আসে। আজকাল দেশে এমনটা কোথাও দেখা যায় না। এর কারণ হলো, অসৎ এবং দূর্নীতিপরায়ণদের ডাকে জনগণ সাড়া দেয় না। এখনো আমার ডাকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসার জন্য প্রস্তুত আছে। কারণ দূর্নীতির কোনো কাঁদা আমার শরীরে লাগেনি।

প্রতিবেদক: বিভিন্ন সমাবেশে আপনি সবাইকে নামাজ পড়াসহ ধর্মীয় আচার-আচরণ মেনে চলার কথা বলেন। এটা কেন?

অলি: আমরা আজ আছি কাল থাকবো না। সবাইকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতেই হবে। আল্লাহর কাছে প্রতিটি কাজের জবাব দিতে হবে। সুতরাং কেনো আমরা অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করবো। এসব করলে আমাদেরকে পরকালে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। অবশ্য কিছু অত্যাচারী দুনিয়াতেই শাস্তি পায়, যাতে করে অন্যরা সতর্ক হয়। তারপরও অনেকে এসব থেকে শিক্ষা নেয় না।

কর্নেল ড. অলি আহমদ (বীরবিক্রম) ছয়বার এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে পাঁচ বারই বিএনপি'র টিকেটে। ২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বের হয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করেন। ২০০৮ সালে নিজ দল থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। ড. কর্নেল অলি বলেন, তার আসনে বিএনপির কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। গত ১৪ বছর ধরে নেতাকর্মীদের বিপদ-আপদ জেল-জুলুম মোকাবিলায় তাদের পাশে আছেন তিনি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –