মানবমুক্তির ব্রতে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা পরিকল্পনা
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২১
মানবমুক্তির ব্রতে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা পরিকল্পনা
পরাধীন বাংলায় বাঙালি চরিত্রের ছিদ্রান্বেষণে মেকলে সাহেবরা মস্করার হাট বসাতেন। তাদের গোত্রের ফ্রান্সিস বেকনের আপ্তবাক্য ‘শিক্ষাই শক্তি’। এই শিক্ষা কীভাবে মানুষের জীবনচর্চার পরিবর্তন ঘটিয়েছে, তা আমরা এখানে ব্যাখ্যা করব না। তবে বাংলা তথা ভারত অধিকারের পর ধূর্ত বেনিয়া শাসকরা এই আপ্তবাক্যের তেলেসমাতিতে দীর্ঘসময় এদেশ শোষণ করেছে। এই শিক্ষা যদি দিগভ্রান্ত হয়, তাহলে মানব সম্পর্কের মধ্যে ফাটল সৃষ্টির ক্ষমতা এর চেয়ে বেশি নেই। এই কাজটি তারা দক্ষতার সঙ্গে করে গেছে।
আমাদের দেশে গুরুগৃহে শিক্ষার আয়োজন দীর্ঘকালের প্রাচীন। স্বর্গের ভাগ্যবানরা মর্ত্যের পর্ণকুটিরে জ্ঞান অন্বেষণে আসত একদা। নিকট অতীতে বাংলা-বিহারের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দূরদেশের মানুষ কৃতি হয়ে ফিরে গেছেন। এর নজির ইতিহাসে আছে। যেমন চীনের হিউয়েন সাঙ্ সপ্তম শতকে এ দেশে এসে বাঙালি পণ্ডিত আচার্য শীলভদ্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
মুসলিম আগমনের পর অবস্থার হেরফের হলেও টোল-মক্তবের লেখাপড়ায় মানববিদ্বেষ ছড়ায়নি। চতুর বেনিয়ারা বাংলা তথা ভারত অধিকারের পর প্রথম থেকেই এ অঞ্চলের মানুষকে ধর্মকেন্দ্রিক বিভাজনের উদ্দেশ্যে সরকারিভাবে সংস্কৃত কলেজ এবং অ্যাংলো অ্যারাবিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। এই বিভেদভাবনা কার্যকর করার জন্য ‘টড’ আর ‘হান্টার’কে দিয়ে কল্পকাহিনিকে হারমানার মতো গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের মননে বিদ্বেষ বীজ প্রোথিত করার ব্যবস্থা নেয়, সেই থেকে শুরু। যার অবসান সুদূরপরাহত। বঙ্গবন্ধু সেই অচলায়তন ভাঙতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সুশিক্ষার ব্যবস্থা করে দেশ এবং মানুষকে মুক্ত করতে।
ভাষা-সংস্কৃতি আর দূরত্বের ব্যবধানে ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়েছে। শিক্ষার্থীর মগজে সাবেকিধারা এবং পাকিস্তানি জজবা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চলমান। অনেকের দেখা ঘটনা, আইউব খানের ভাষাকৃষ্টি বিষয় প্রবর্তনের বিরুদ্ধে কী উত্তাল আন্দোলন হয়েছিল! আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ এখন সরকারের শিক্ষা বিষয়টির দেখভাল করেন।
বঙ্গবন্ধু বাংলার ইতিহাস অবহিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। বাঙালির দুঃখজয়ের ইতিহাসে বিজয়ের প্রতীক তিনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে সর্বকালের সকল বঞ্চনাকে হার মানিয়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালায়। এজন্য শিক্ষাকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া হয়। একদা ‘শান্তির নীড়’ বাঙালির উঠোনে সম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থা হানা দেয়। যার সূচনা করেছিল দখলদার বেনিয়া সরকার।
বঙ্গবন্ধু মানবমুক্তির ব্রতে নিজের জীবনে ভোগের বিষয়টি বিসর্জন দিয়েছিলেন। বাংলাদেশকে বাঙালির বাসযোগ্যরূপে গড়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে যাবতীয় বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীর মননের মুক্তির জন্য কাজ শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষার ভিত মজবুত করার লক্ষ্যে জাতি-গঠনের আওতায় শিক্ষাকে প্রাধান্য দেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বালক খোকা শিক্ষার অবমানিত অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন ব্রিটিশ বাংলায়। কিছু সরকারি ও মিশনারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর ভাগ্যবানদের সন্তানদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয়, যা সাধারণ জনগণের সাধ্যের অতীত ছিল। এগুলো ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য গড়ে তোলা শিক্ষালয়গুলো চলত যুগের পর যুগ ধরে লাঞ্ছনার বোঝা মাথায় নিয়ে।
জনগণের মৌলিক অধিকার শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের (১৯৭২) বাহাত্তরের সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে “সবার জন্য শিক্ষা’কে গুরুত্ব দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য, (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য, (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।”
সংবিধানকে কাগুজে করে না রেখে তাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য ১৯৭২ সালের ২৫ জুলাই জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠিত হয় এবং একই বছরে ২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিক্ষা-কমিশন উদ্বোধন করেন। উদ্দেশ্য ছিল জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা রূপায়ণ ও ভবিষ্যৎ সমাজ নির্মাণের হাতিয়ার হিসেবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, জাতীয় মূলনীতিগুলো সামনে রেখে। এই শিক্ষা কমিশনের প্রধান নিয়োগ করা হয় ধীমান শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ কুদরাত-ই-খুদাকে। সেই থেকে এই কমিশনের নাম হয়ে যায় কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন। কমিশনের রিপোর্ট ১৯৭৪ সালের ৪ মে সরকারের কাছে পেশ করা হয়। বঙ্গবন্ধু এতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ১৯৭৩ সালেই বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করে ফেললেন। কেবল তাই নয়, বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বিতরণেরও ব্যবস্থা করলেন। তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল, ৪৭ হাজার দুশোর কাছাকাছি। বঙ্গবন্ধুর সোনার কাঠির পরশে অবহেলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সরকারি কর্মচারীর মর্যাদায় ভূষিত হলেন। এ অঞ্চলের জ্ঞাত ইতিহাসের পাতায় এমন অভূতপূর্ব শিক্ষানুরাগ বাঙালির অশ্রুতপূর্ব।
বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারের আওতায় নিয়ে আসতে। এটা তিনি অবশ্যই করতেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক বঙ্গবন্ধুকে বোঝালেন, তাদের স্বায়ত্বশাসন দেয়ার জন্য। মানুষের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তাকে জীবনের অর্ধেক সময় কারান্তরীণ থাকতে হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিলেন ওই ১৯৭৩ সালেই। যাকে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ’৭৩-এর অ্যাক্ট।
কিছু আত্মঘাতী বাঙালি চরিত্রের বহুচারিতা এবং আত্মকেন্দ্রিকতা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল। সুযোগ পেলে তারা শিক্ষার উন্নয়নের পরিবর্তে আত্মন্নোয়নে ব্যাপৃত হবেন, সে অনুমান তার চেতনায় উঁকি দিলেও বিশাল হৃদয় বঙ্গবন্ধু বঞ্চিত শিক্ষকের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ছিলেন বাঙালির শির উন্নত করার জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির সুশিক্ষায় মানবমুক্তির দীক্ষা দিতে। আমরা কী করেছি, ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে নিরন্তর। যুদ্ধবিদ্ধস্ত রাজকোষশূন্য দেশে এমন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ ইতিহাসে বিরল।
আমরা শিশুরাষ্ট্র বাংলাদেশের শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহের কথা বলতে গিয়ে কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেছি। মাঝে ওই ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে অন্যত্র দৃষ্টি ফেরাতে হয়েছে।
শিক্ষাকে মানবমুক্তির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্টিত করার জন্য খুদা কমিশনে জাতীয় মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র; ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে মানবতা ও বিশ্বনাগরিকত্ব, নৈতিক মূল্যবোধ, সমাজ রূপান্তরের বিষয়াবলি, প্রয়োগমুখী অর্থনেতিক অগ্রগতির অনুকূল শিক্ষা, কায়িক শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলি ইত্যাদি সংযোজিত করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় পরিচিত করতে। সে সুযোগ বঙ্গবন্ধু পাননি। কেন পাননি, ইতিহাস তার অনেক সত্য উদঘাটন করেছে।
শিক্ষার অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাদানে নিরত ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে তিনি ভাবিত হতেন। যেন-তেন প্রকারের শিক্ষক নিয়োগ করে নিজের আসন পোক্ত করতে চাননি।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অধিকতর বিপর্যস্ত করে তোলে কিছু লুটেরা, বিজ্ঞানওয়ালা, তাদের কৃত্রিমদোসর, পাকিস্তানি পদলেহী দেশি-বিদেশি পরাজিত চক্রান্তকারী। এ সময়ে বেসরকারি কলেজগুলো জাতীয়করণের দাবিতে একযোগে ধর্মঘট শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু সুশিক্ষাদানকারী প্রকৃত শিক্ষকের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকলেও তিনি এ সত্য বোধকরি অনুমান করতে পেরেছিলেন, যারা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য সমর্থনের ভাব দেখিয়ে এগিয়ে আসে, তারাই আবার ক্ষমতাদখলকারীদের কাছে হাঁটু গাড়তে লজ্জাবোধ করে না। তিনি শিক্ষকদের বুঝিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারে সম্মত করেন।
তাছাড়া এ সত্য সর্বজনবিদিত, কিছু ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা এবং সামাজিক মর্যাদার ব্যবস্থা করলেই রাতারাতি শিক্ষার উন্নয়ন হয়ে যাবে, তা বোধকরি সত্য নয়।
সংবিধানে ‘যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত’ মেধাবী ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনে বিষয়টির সর্বাধিকার দেয়া আছে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্র ঐতিহ্য অনুসরণ করেন। রাবীন্দ্রনাথ আবার দৃষ্টি প্রসারিত করেন বিদ্যাসাগর পর্যন্ত। রবীন্দ্রনাথের ভাষ্য: “আমাদের এই অবমানিত দেশে ঈশ্বরচন্দ্রের মতো এমন অখণ্ড পৌরুষের আদর্শ কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করিল, আমরা বলিতে পারি না। কাকের বাসায় কোকিলে ডিম পাড়িয়া যায়, মানব-ইতিহাসের বিধাতা সেইরূপ গোপনে কৌশলে বঙ্গভূমির প্রতি বিদ্যাসাগরকে মানুষ করিবার ভার দিয়েছিলেন।” রবীন্দ্রনাথ এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে ব্রতী শিক্ষাগুরুদের খুঁজে ফিরেছেন। তিনি জানতেন, কৃতিশিক্ষক দুর্লভ; কিন্তু কেবল সনদধারী শিক্ষাজীবী ভয়ঙ্কর। রবীন্দ্রানুরাগে অভিষিক্ত বঙ্গবন্ধু সত্যিকারের শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে নতুন করে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার ভাবনা কার্যকর করতে চেয়েছিলেন। সবার সঙ্গে এক হয়ে থেকেও প্রকৃত শিক্ষকসমাজ মানবমুক্তির মিছিলে অগ্রণীর ভূমিকা পালন করতে পারেন, এ সত্য তার জানা ছিল। তাই তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন।
সাধারণ শিক্ষা, চিকিৎসা শিক্ষা, আইন শিক্ষা, কৃষিশিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু অনেককে সুবিধা দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য, সম্মিলিতভাবে সবাই এক হয়ে দেশ ও জাতির গৌরব প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানের শেষের দিকে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, অনেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী নিয়োগ পান, নানা দেনদরবার করে। শোনা যায়, এদের কেউ কেউ কাঁধে জায়নামাজ আর মাথায় টুপি পরে খাঁটি পাকিস্তানি সেজে অস্থায়ী চাকরি জোগাড় করেন। শর্ত ছিল যথাসময়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে তারা স্থায়ী হবেন। সে শর্ত তারা পূরণ করতে পারেননি। বাঙালি জননীর মতো কোমল হৃদয় বঙ্গবন্ধু এদের নিয়মিতকরণের নির্দেশ দেন।
এলএমএফ পাস করা চিকিৎসকবৃন্দ মেডিক্যাল স্কুল পর্যন্ত লেখা পড়া করেছিলেন। তাদের বছরখানেক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এমবিবিএস ডিগ্রি প্রদান করেন। মেডিক্যাল শিক্ষার অপ্রতুল দূর করার জন্য বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও সাময়িক ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক ভেদ তুলে দিতে চেয়েছিলেন। চিকিৎসার মতো আইন শিক্ষার ব্যাপক প্রসার আগে ছিল না। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে অনেকে মোক্তারি পড়ে আইন ব্যবসায়ে যুক্ত হতেন। বঙ্গবন্ধু এদের অ্যাডভোকেট পরিচয়ে সম্মানিত করলেন। তার দুঃখ ছিল, বাংলার মানুষ পুরুষানুক্রমে মামলার ধারাবাহিকতা বহন করে যায়। মোক্তারদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে বাংলার জনগণের মামলায় সর্বস্বান্ত হওয়ার দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন, সবাইকে এক কাতারে সন্নিবেশ করে শিক্ষা-চিকিৎসা-সামাজিকন্যায়বোধে উদ্বুদ্ধ করতে। সে মর্যাদা আমরা কতটুকু বহন করেছি? ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করছে। এ ছাড়াও কৃষিশিক্ষার অপরিহার্যতা স্মরণে রেখে কৃষি কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির চাকরির পদমর্যাদা দেন তিনি। আগে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির ছিলেন।
মানুষের মন কম্পাসের কাঁটার মতো নয় যে, সব সময় একমুখী হয়ে থাকবে। তবে রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের প্রয়োজনে কোনো কোনো সময় কিছু বিষয়ে একমুখিতার প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধু নানা কিসিমের শিক্ষাব্যবস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে এক ছাতার তলে আনতে চেয়েছিলেন। তাই বলে ভাষা শিক্ষা কিংবা ধর্মশিক্ষার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাননি। তবে ভাষা ও ধর্মের মাধ্যমে বিদ্বেষবিষ ছড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করার চিন্তা কম করেননি।
সুষ্ঠু পরীক্ষা গ্রহণ শিক্ষার অপরিহার্য স্তম্ভ। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, জেনারেল আইউব খান ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য পোষা পেটোয়া বাহিনী গঠন করেন। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্যান্য নৈরাজ্যের সঙ্গে পরীক্ষায় নকল করার ছাড়পত্র পায়। এই প্রবণতা সংক্রমিত হয়ে দেশময় ছড়িয়ে পড়ে।
দেশ স্বাধীন হলে ছাত্র-শিক্ষক মিলে নকলের উৎসবে মেতে ওঠে। বঙ্গবন্ধু কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে নকল-নৈরাজ্য প্রশমিত করেন। শিক্ষার স্বাভাবিক গতি ফিরে আসতে থাকে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রণীত শিক্ষা-সংক্রান্ত নিবিড় পরিকল্পনা পূর্ণ বাস্তবায়নের আগেই কুচক্রীমহল পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায় পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ তাকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়।
বলা হয়ে থাকে আলেকজান্ডারের দেশজয়ের নেপথ্যে ছিলো মানবমুক্তির অভিলাষ। রবীন্দ্রনাথ সুশিক্ষার মাধ্যমে মানবমুক্তির বন্ধুর পথ অতিক্রমের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাদের উত্তরসাধক বঙ্গবন্ধু সুশিক্ষার সুষ্ঠু কর্মপন্থাকে মানব-মুক্তির সোপান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা পরিকল্পনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত খতিয়ান আমরা ফিরে দেখলাম। এসবের যথাযথ বাস্তবায়নে আমরা নিজেরাই ধন্য হবো এবং সুশিক্ষা মানবমুক্তির সত্যিকার দিশারি হয়ে উঠবে।
লেখক: গোলাম কবির
সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ।
- `জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি` ব্রিটিশ স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন
- তেঁতুলিয়ায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন
- গ্রীষ্মকালে শীতল ত্বক : শসার মাস্ক
- মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে
- বাংলাদেশ-গাম্বিয়া জয়েন্ট বিজনেস টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব
- ডর্টমুন্ডের সঙ্গে এক যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করছেন এই ফুটবলার
- ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে পুরস্কার পেলেন ‘অভাগী’ মিথিলা
- হজের ক্ষেত্রে শয়তান যেসব ওয়াসওয়াসা দেয়
- মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো কুয়েত
- যেসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনিবার বন্ধ থাকবে
- আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান: ইসি রাশেদা
- খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণের আহ্বান প্রধান বিচারপতির
- রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি চায় বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
- সাত জেলায় দুপুরের মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টির আভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা
- ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে’
- বাংলাদেশ-ভারত আজ একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে: সেলিম মাহমুদ
- ওরাল ক্যান্সার সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন হতে হব- প্রতিমন্ত্রী রিমি
- তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মৃত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর
- জানা গেল এসএসসির ফল প্রকাশের তারিখ
- সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন: প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান
- তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মৃত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর
- পরিবারের হাল ধরতে চেয়ে হয়ে গেলেন বোঝা
- রাণীশংকৈলে ভুট্টাক্ষেত থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জে ২৭ জনের মনোনয়ন দাখিল
- সর্বজনীন পেনশন স্কিম মেলা উপলক্ষে রংপুরে সংবাদ সম্মেলন
- বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতীয় খাদ্যপণ্য
- যে কারণে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ
- ৫৩ বছর বয়সে জীবনসঙ্গী খুঁজছেন মনীষা
- ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমিক মালিকের পরিবারভুক্ত
- `নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে`
- অবশেষে আজ তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
- শেষ বলে ১ রানের নাটকীয় জয় পেল কলকাতা
- কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ
- পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে
- আন্তর্জাতিক চাপে মুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি নাবিকরা: নৌপ্রতিমন্ত্রী
- হজ পালনে অনুমতি বাধ্যতামূলক করল সৌদি
- যে কারণে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ
- ‘বনভূমি দখলে স্থাপিত রিসোর্টগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালবে’
- নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্তক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের
- শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা, তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে
- ইসরায়েলের এই বর্বরতা মেনে নেয়া যায় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা
- ২ মে থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা, হতে পারে কালবৈশাখীও
- ‘সব প্রাইভেট হাসপাতালের রোগনির্ণয় ফি নির্ধারণ করা হবে’
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হোক মানুষের কল্যাণে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- জনপ্রিয় অভিনেতা রুমি মারা গেছেন
- ত্বকের দাগ দূর করবেন যেভাবে
- গরমকালে বাড়ি ঠান্ডা রাখার চীনা প্রাচীন কৌশল
- কোরবানির নিয়তের পর পশু বিক্রি করার বিধান
- ‘যাকাত বোর্ড শক্তিশালী হলে দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত হবে’