• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ভাষা চর্চাও একটি ইবাদত

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর নেয়ামাতে আজিমাহর অন্যতম নেয়ামত হলো ভাষা। সবপ্রাণীদেরই নিজস্ব ভাষা রয়েছে; কিন্তু মানবজাতির জন্য আল্লাহ মহান যে ভাষা দিয়েছেন তা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা। আবার পৃথিবীর সবভাষার মাতৃভাষা মানুষের কাছে প্রিয় ও আদরণীয়।

ভাষা মনুষ্যপরিচয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পশুপাখি ও প্রাণীকূল থেকে মানুষের স্বতন্ত্রতার অন্যতম একটি  উপাদান হলো ভাষা। মাতৃভাষা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের মানিত ধর্ম ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে ও দিতে বলে। ভিন্ন ভাষার প্রতি কোনোরূপ অসাধুতা ইসলাম কখনো পছন্দ করে না। আমি ইতিহাসে দেখতে পাই মহান আল্লাহ তার বিভিন্ন নবীকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাষা দিয়ে প্রেরণ করেছেন। কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন। শুনুন আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা-

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِلْعَالِمِينَ

অর্থাৎ ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্রতা। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা: আররুম, আয়াত: ২২-২১)।

আমরা মানুষ হলাম আল্লাহ তায়ালার ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক। মহান আল্লাহ আমাদেরকে মনের ভাবভঙ্গি প্রকাশ করার জন্য দিয়েছেন ভাষা। এই ভাষায় একজন অন্যজনের সুখ বুঝে, চিন্তা বুঝে, বুঝে চেতনা, আহ্বান বা বেদনা। একারণে আরবিতে মানুষকে বলা হয় ‘হাইওয়ানুন নাতিকুন’ তথা বাকশক্তি সম্পন্ন প্রাণী। সবভাষা আল্লাহর সৃষ্টি তাই, কোনো ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্বের স্থান অন্যস্থানে। সব মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান। সবারই একই পিতা বাবা আদম আলাইহিস সালাম ও একই মাতা হাওয়া আলাইহাস সালাম এর সন্তান। সাদা-কালো, লম্বা-খাটো- সে তো আল্লাহর সৃষ্টি। বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈষম্য এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্তিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ সৃষ্টি করে না। কোরআনে করিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

অর্থাৎ: ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাকি বা তাকওয়াবান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন।’ (সূরাতুল হুজুরাত, আয়াত : ১৩)।

নবী-রাসূলদের ভাষা: সব নবীকে তার স্বজাতীয় ভাষাভাষী করে প্রেরণ করা হয়েছে। যদি শিক্ষকই বইয়ের ভাষা না জানে; সে ছাত্র পড়াবে কিভাবে? সব নবী রাসূল উম্মতের শিক্ষক ছিলেন। মহান আল্লাহ কাউকে নতুন কিতাব দিয়েছেন, কাউকে আগের নবীর কিতারে ওপর রেখেছেন। যে যে কিতাব নিয়ে এসেছেন বা যে নবী যে কিতাব অনুসরণ করেছেন সকলেই তদীয় কিতাবের ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। সেই কথা আমাদের কোরআন এভাবে বর্ণনা করতেছে,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

অর্থাৎ: ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি যেন তারা জাতির কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।  (সূরাতু ইব্রাহিম : আয়াত নম্বর: ০৪)।

এই কথা থেকে বুঝা যায় যদি কোনো নবী আমাদের বাংলাদেশে আসতো; তাহলে অবশ্যই সে নবী বাংলা ভাষাভাষী হতেন।

শেখ আবদুর রহমান জামি (রহ.) পারস্যবাসী হয়েও বিশ্বের সেরা আরবি ব্যাকরণের তাত্তিক বিশ্লেষণ গ্রন্থ শারহে জামি (ফাওয়ায়িদে জিয়াইয়া) রচনা করেন, যা কাফিয়া গ্রন্থের প্রণেতা ইমাম ইবনে হাজিব (রহ.) রচিত কাফিয়া গ্রন্থের ব্যাখ্যা। এ গ্রন্থের আরো জগদ্বিখ্যাত বিশ্লেষণ পুস্তক রয়েছে; সুওয়ালে কাবুলি, সুওয়ালে বাসুলি, তাহরিরে চম্বট ইত্যাদি এর অন্যতম।

চলছে আমাদের ভাষার মাস। এই মাসে আমাদের নতুন শপথ হতে পারে যে, মাতৃভাষার সঙ্গে ধর্মীয় ভাষাকেও আমরা সমান গুরুত্ব দেবো, ইনশাল্লাহ! 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –