• বুধবার ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২৪ ১৪৩১

  • || ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২৩  

সবুজ-শিক্ষা ও ঐতিহ্যের রেশম নগরী হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রাজশাহীর একটি সমস্যা ছিল কর্মসংস্থান। এই সমস্যা এখন অপার সম্ভাবনায় রুপান্তর হয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে যুগপোযোগী দক্ষ জনবল তৈরি করে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকারের নেয়া হাইটেক পার্ক প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে রাজশাহীবাসী। এ অঞ্চলের তারুণ্যকে বদলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্ক। 

জানা যায়, তরুণদের প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে হাইটেক পার্ক। শিক্ষা নগরীকে কর্মবান্ধব নগরী করার প্রচেষ্টায় কালের দিশারী এই ‘হাইটেক পার্ক’। যার সুফল পাচ্ছে রাজশাহীবাসী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক রাজশাহীর জয় সিলিকন টাওয়ার ও শেখ কামাল ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের মোট ২৩টি আইটি প্রতিষ্ঠান বদলে দেওয়ার রুপকার হিসেবে কাজ করছে। প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা রাজশাহী হাইটেক পার্ক প্রকল্প এরইমধ্যে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছে। প্রত্যক্ষভাবেই হাজারো তারুণ্যের কর্মসংস্থান হয়েছে। 

রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে একটি আইটি ভিলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ একনেকে সরকারি আদেশ হিসেবে জারি হয়। রাজশাহী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় একই বছরের ১৪ সেপ্টম্বর।  

এরপর পুরোদমে চলতে থাকে নির্মাণকাজ। নির্মাণকাজ শেষে বর্তমানে শেখ কামাল ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারে গত কয়েক বছর ধরে ৮ কোম্পানির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৩ শতাধিক দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে। যারা নিজেরা অনলাইন মার্কেটে সফলতার সঙ্গে কাজ করে নিজেদের বেকারত্ব ঘুচিয়ে এখন দক্ষ জনবল তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া জয় সিলিকন টাওয়ারে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও হাজারো তরুণ কাজ করছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে কর্মসংস্থানের পরিধি।  

রাজশাহী হাইটেক পার্কে স্পেস বরাদ্দ নিয়ে কাজ করে সবচেয়ে সফল ও আলোচিত হয়েছে  ‘ফ্লিট বাংলাদেশ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এই আইটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা রাজশাহীর খাইরুল আলম। এখন পর্যন্ত তিনি রাজশাহীর সফল আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।   

খাইরুল আলম জানান, অদক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও কাজের দক্ষতা বিবেচনায় পরবর্তীতে তাদের স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে থাকে তার প্রতিষ্ঠান। মাত্র ১০ জন কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে তার ৩ শতাধিক কর্মী রয়েছে।

তিনি আরো জানান, শুরুর এক সপ্তাহের মাথায় ক্লায়েন্ট যখন তাকে দুই হাজার ডলার পাঠান, সেখান থেকেই এটিকে পেশা হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।  

শুধু খাইরুল ইসলামই নয়; এখানকার উদ্যোক্তাদের গল্পগুলো প্রায় এমনিই। তারই মতো আরেক উদ্যোক্তা অ্যারোডেক্স আইটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সুলতান মোহাম্মদ আনসারী। এইচএসসি পাস করার পরপরই আইটি জগত সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন শুরু করেন তিনি। ২০১২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর অনলাইন মার্কেটিংয়ের কাজ করেন। এরপর রাজশাহীতে ফিরে এসে ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে হাইটেক পার্কে স্পেস নিয়ে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য জনবল তৈরির পাশাপাশি গুগুলসহ আন্তজার্তিক আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। 

তিনি জানান, আইটি জগতে কর্মসংস্থানে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন। রাজশাহীতে দক্ষ লোকের প্রচুর অভাব রয়েছে। এ কারণে তারা ট্রেনিং প্রোগ্রামও চালু করেন। এতে যেসব দক্ষ ছেলে-মেয়ে তৈরি হচ্ছে, তাদের কর্মসংস্থানও তারাই করতে পারছেন। 

২০১৫ সালে অনলাইন মার্কেটে হাতেখড়ি হয়েছিল আরেক উদ্যোক্তা ডিএম সলিউশনের ফাউন্ডার মো. সোহেল রানার। কলেজে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তিনি আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যান। বর্তমানে সফলতার সঙ্গেই হাইটেক পার্কে স্পেস বরাদ্দ দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি আন্তজার্তিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে তার কর্মীরা।

সোহেল রানা জানান, তার বাড়ি মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি হরিপর পাড়া এলাকায়। ২০১৫ সালে অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। কিন্তু সে সময় এলাকায় নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা ছিল না। ছিল নানা প্রতিবন্ধকতাও। সেগুলো পেরিয়েই এখন নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক রাজশাহী প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল কবীর জানান, হাইটেক পার্ক আইটি উদ্যোক্তাদের প্রণোদিত করার পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছেন তারা। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কোর্স নিয়ে আসা হচ্ছে। রাজশাহীতে হাইটেক পার্কের কার্যক্রমের খুবই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে দক্ষ লোক তৈরিতে কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে। 

রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কর্মসংস্থানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ৩১ একর জায়গায় শেখ কামাল আইটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। জয় সিলিকন টাওয়ারসহ সবগুলোতেই আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখানে শিক্ষা নগরী রাজশাহীর প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। হাইটেক পার্কটি দেশের অগ্রযাত্রাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –