• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পঞ্চগড় নারী ফুটবলার তৈরির কারিগর বিপুল

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৪  

নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দেশের জন্য একের একের পর এক সাফল্য বয়ে আনছে পঞ্চগড়ের নারী ফুটবলাররা। পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতেও খেলছে তারা। দাপটের সঙ্গে খেলে বিজয় ছিনিয়ে আনায় আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গণে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের নাম। যার পেছনে রয়েছে এক কারিগরের গল্প।

পঞ্চগড়ের নারী ফুটবলাররা সময়ের সঙ্গে দেশের মুখ উজ্জল করে একের পর এক সাফল্য নিয়ে আসছে। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে খেলছে তারা। আর সফলতার গল্পের পেছনে রয়েছেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা ফুটবল একাডেমির ফুটবল কারিগর মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। নিজের আত্মবিশ্বাস গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে ফুটবল খেলায় টানছে তরুণীদের। কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের করে তুলছে দক্ষ।সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ-১৬ নারী ফুটবল চাম্পিয়নশিপে খেলেছে পঞ্চগড়ের চার নারী ফুটবলার। এদের মধ্যে টু্র্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছেন পঞ্চগড়ের টুকু একাডেমির খেলোয়াড় ইয়ারজান বেগম। তবে একই দলে আরও খেলেছেন বোদা ফুটবল একাডেমির আলপী, বৃষ্টি রায় এবং শিউলী রায়।

এই একাডেমির হাত ধরে পথ চলা শিউলী রায়, আলপী ও বৃষ্টি রায় জানান, ক্রীড়া অঙ্গনে পথ চলার প্রথম ধাপটি অনেক কষ্টের ছিল। পরিবার খুব একটা সমর্থন করতো না। এর মাঝে মাঠে খেলতে গিয়ে প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর কটু কথার শিকার হয়েছে তারা। তবে প্রথম পথ চলা শুরুর পর তাদের সাফল্যের প্রথম চাবিকাটি ছিল এই একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। তার নির্দেশনায় এখন তারা জাতীয় পর্যায়ে খেলছে।
 
বর্তমানে তরুণদের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক নারী ফুটবলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পঞ্চগড়ের বোদা ফুটবল একাডেমিতে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও নিজ স্বপ্নের পথে নতুন এই নারী ফুটবলাররা। এদিকে এই ফুটবল একাডেমি সারাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
 
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বোদা ফুটবল একাডেমিতে যে নারীরা খেলছে, এতে আমাদের খুব ভালো লাগছে। কারণ এক সময় তারা ঘর থেকে বের হতে পারতো না। এখন তারা বের হয়ে দেশ ও বিদেশের মাটিতে খেলছে। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।’
 
একই কথা বলেন উম্মে হাবিবা হিরা। তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা যে যুগে আছি সেখানে ছেলে মেয়ের কোনো তফাত নেই। আমার সন্তান এই একাডেমিতে খেলে। আমি দেখেছি বিভিন্ন সময় এখানকার মেয়ে খেলোয়াড়রা স্থানীয়দের কাছে বিভিন্ন কথা শুনেছে। মূলত গ্রামের মানুষ মেয়েদের খেলাকে ভালো চোখে দেখতো না। তবে এই একডেমির হাত ধরে জাতীয় পর্যায়ে ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেয়েরা খেলে দেশের নাম উজ্জ্বল করায় এখন সকলের নাম উজ্জ্বল হয়েছে।’
 
তবে বোদা ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলার পেছনের বিবর্ণ ইতিহাসের কথা জানান নারী ফুটবলার তৈরির কারিগর বিপুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের পথ চলার প্রথম ধাপ অনেক কষ্টের ছিল। স্থানীয়রা ও অভিভাবকরা মেয়েদের খেলাকে ভালো চোখে দেখতো না। তবে অভিভাবকরা আমার উপর বিশ্বাস রেখে তাদের সন্তানদের একাডেমিতে পাঠাতো। আর আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিতাম। যখন তারা ভালো করতে শুরু করে তখন সকলের ভরসা বাড়তে থাকে। এখন আমার এই একাডেমি থেকে অনেক খেলোয়াড় জাতীয় থেকে শুরু দেশ ও বিদেশের মাটিতে খেলছে।’
 
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এই একাডেমিতে বর্তমানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেটা পেলে দেশের জন্য আরও ভালো খেলোয়াড় উপহার দিতে পারব আমরা।’ 

এদিকে পঞ্চগড় জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা গৌতম কুমার সরকার বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ে নারী ফুটবল জাগরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে আমাদের পঞ্চগড়ের মেয়েরা। এ মেয়েরা বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলে খেলছে। সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করে আমাদের নারী ফুটবল একাডেমি বোদা ও পঞ্চগড় সদরের টুকু ফুটবল একাডেমিসহ বিভিন্ন একাডেমি। আর এসব মেয়ে খেলোয়াড়দের তৃণমূল পর্যায় থেকে বের করে আনতে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।’ একই সঙ্গে ফুটবলে এগিয়ে যাওয়া এই নারী ফুটবলারদের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান এই ক্রীড়া কর্মকর্তা।

পঞ্চগড়ের ক্রীড়া অঙ্গনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের এগিয়ে নিতে ২০১৮ সালে এই একাডেমি চালু করেন খেলোয়াড় তৈরির কারিগর মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব- উনিশ সাফ চাম্পিয়নশিপে খেলেছিলেন বোদা ফুটবল একাডেমির তৃষ্ণা রানী আর নুসরাত জাহান মিতু। (সময় সংবাদ)

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –