• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

রেকর্ড পরিমাণ কমলা-মাল্টাজাতীয় ফল আমদানি

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২১  

কভিড মহামারিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে; ফলে দেশি-বিদেশি ফলসহ প্রচুর পণ্যের চাহিদাও কমেছে। এসব ফলের বেচাকেনার পাশাপাশি কমেছে আমদানিও। ভিটামিন ‘সি’জাতীয় ফলের ক্ষেত্রে এই চিত্র পুরোপুরি উল্টো। কভিড প্রতিরোধে ভিটামিন ‘সি’জাতীয় ফল খাওয়ার পরামর্শ জানার পর থেকেই দেশি-বিদেশি ‘সি’জাতীয় ফলের চাহিদা বেড়েছে। বাজারে দাম চড়ার পরও মানুষ যে খাওয়া বাড়িয়েছে, এর প্রমাণ মিলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কমলা-মাল্টা আমদানির চিত্রে!

কাস্টমসের হিসাবে, সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ কমলা-মাল্টাজাতীয় ফল আমদানি হয়েছে। এতটাই বেশি আমদানি হয়েছে রাজস্ব আয়েও সর্বোচ্চ ২০ পণ্যের তালিকার ১৫-তে স্থান করে নিয়েছে এই ফল। টাকার অঙ্কে গত অর্থবছরে এক হাজার কোটি টাকার বেশি কমলা-মাল্টা আমদানি হয়েছে শুধু এই সমুদ্রবন্দর দিয়েই। বাজারমূল্য বিবেচনা করলে অবশ্য এই হিসাব অনেক বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় এবার আমদানি ফলের মধ্যে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছেন কমলা-মাল্টায়।

ফল আমদানিকারক জিএস ট্রেডিংয়ের মালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আপেলের তুলনায় কমলা বেশ ভালো ব্যবসা করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০২০ সালের মার্চে প্রথম কভিড লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজটে পড়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারভর্তি প্রচুর কমলা আটকা পড়ে। তখন বেশ সরবরাহ সংকট হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পর এই খাতের ব্যবসায়ীর সঙ্গে অন্য খাতের ব্যবসায়ীরাও এসে একসঙ্গে এত বেশি মাল্টা কমলা আমদানি করে বাজারে ধস নামিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘গত রমজানের শুরু থেকে কোরবানি ঈদ পর্যন্ত এক হাজার ৭০০ টাকায় কেনা এক কার্টন মাল্টা সাড়ে ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এই কারণে আমদানি বন্ধ করেছেন অনেকেই; এর নেতিবাচক প্রভাবে গত কয়েক দিনে দাম বেড়ে কার্টনপ্রতি দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কমলা আমদানি হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। এর বাইরে অবশ্য স্থলপথ দিয়ে ভারত থেকেও আমদানি হয়, কিন্তু সেটি নির্দিষ্ট কয়েক মাসে। আর সমুদ্রবন্দর দিয়ে বছরজুড়েই আমদানি হয় মাল্টা; মিসর থেকে আসে নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত। আর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসে বাকি সময়ে। কমলা আসে প্রধান চীন থেকে, কিছু সময় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও আসে।

কাস্টমসের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এক লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টন কমলা-মাল্টা আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৪৬১ কোটি টাকা, যা ইতিহাসের রেকর্ড। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমলা-মাল্টা আমদানি হয়েছিল এক লাখ ১৬ হাজার টন; সেই অর্থবছরের কিছু সময় থেকেই দেশে কভিড মহামারি ছিল। মূলত তখন থেকেই এই কমলা-মাল্টার আমদানি বেড়ে যায়। সেই অর্থবছর কমলা-মাল্টা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩০৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমলা-মাল্টা আমদানির দু-একটি তথ্য বিশ্লেষণ করলেই আমদানি বাড়ার চিত্র পাওয়া যাবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কমলা-মাল্টা এসেছিল মাত্র ৫৬ হাজার টন; রাজস্ব পেয়েছিল ১৩৮ কোটি। অথচ সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল এক লাখ ৭১ হাজার টন; আর রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪৬১ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে ৪৭ শতাংশ; আর রাজস্ব আয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রতিবছর ২০টি আমদানি পণ্যের তালিকা করে; যেখান থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব পাওয়া গেছে। এই তালিকায় সর্বশেষ অর্থবছরে ১৩ নম্বরে উঠে এসেছে কমল-মাল্টা আমদানির নাম। এত দিন তালিকায় থাকত আপেল আমদানি। এবারও আপেল সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়ের তালিকায় আছে তবে ৭ নম্বরে। আগে ছিল ৫ থেকে ৬ নম্বরে। অর্থাৎ আপেলের তুলনায় কমলার খাওয়া বেড়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক সহকারী কমিশনার বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা রাজস্ব প্রদানে সর্বোচ্চ ২০ আমদানি পণ্যের তালিকা করি, সেখানে ফলের মধ্যে আপেল তালিকায় থাকলেও কমলা কখনো স্থান পায়নি। গত অর্থবছর কমলা-মাল্টা আমদানি এত বেশি বেড়েছে; স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব প্রদানের তালিকায় ১৫ নম্বরে স্থান করে নিয়েছে।’

উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা আমদানীকৃত কমলা-মাল্টার বড় ক্রেতা; কারণ দেশি লেবু-মাল্টা-কমলার তুলনায় বিদেশি কমলা-মাল্টার দাম প্রায় দ্বিগুণ। দাম বেশি থাকায় নিম্ন, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা সেগুলো কিনত কম; কোনো উপলক্ষ থাকলেই উপহার হিসেবে কিনেছে। এবার কভিড মহামারিতে নিম্নবিত্ত লোকজনও বিদেশি কমলা-মাল্টা ক্রেতার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ির ভ্যান গাড়ির ফল বিক্রেতা আল আমিন বলছেন, ‘বৃষ্টি না হলে লেবুর দেখা মেলে না। আর নির্দিষ্ট কিছু সময়ে থাকে দেশি মাল্টা-কমলা। করোনার সময়ে তাইলে এসব ফল কই পাবে? তাই বছরের বাকি সময়ে বিদেশি মাল্টা-কমলার কিনেই খাচ্ছে নিম্ন শ্রেণির মানুষজনও।’

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –