• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

দেবীগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে সাড়া ফেলেছে বস ও বিগবস

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২১  

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউপির হাজরাডাঙ্গা উনিশ ঘর এলাকার দরিদ্র কৃষক বাবুল হোসেন। টানাপোড়েনের সংসারে দুটি গরুকে সন্তান স্নেহে বড় করে তুলেছেন। দেহের বিশালতার জন্য গরু দুটির নাম রেখেছেন বস এবং বিগবস।

বিগ বসের বয়স চার বছর। ওজন ২০ মণ। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও লম্বায় ৮ ফুট। বসের বয়স ৩ বছর। ওজন ১৪ মণ। উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি ও লম্বায় ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। বিশালদেহী হওয়ায় গরু দুটোকে বেশিরভাগ সময় ঘরের মধ্যেই রাখতে হয়। টানাপোড়েনের সংসারের মধ্যেও নিজে খেয়ে না খেয়ে ফ্রিজিশিয়ান জাতের ষাঁড় দুটিকে ছোট থেকে প্রাকৃৃতিক উপায়েই বড় করে তুলেছেন বাবুল। প্রতিদিন গরু দুটিকে কাঁচা ঘাশের পাশাপাশি ভূসি, চাপর, খৈল, ছোলা, রান্না করা খুদ, কখনো আপেল ও মালটাও খাওয়ান এই কৃষক। গরু দুটির পেছনে এখন তার দৈনিক ব্যয় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। 

ক্ষুদ্র কৃষি আর স্থানীয় একটি তাঁত কারখানায় কাজ করে কোনো মতে চলে বাবুলের তিন সন্তান, স্ত্রী, মাসহ ছয় সদস্যের সংসার। ঘরগুলোও ভাঙাচোরা। অভাবের সংসারে সম্পদ বলতে ওই গরু দুটি। ভাল দামে গরু দুটি বিক্রি করতেই তিন/চার বছর ধরে সন্তানের মতো লালন পালন করছেন বাবুল ও তার স্ত্রী বুলবুলি বেগম। নিজেরা না খেলেও গরু দুটি কখনো অনাহারে রাখেননি তারা। বাবুলের আশা ভাল কোরবানির বাজারে ভাল দরে বিক্রি হবে তার গরু। গরু বিক্রি করে ভাঙা ঘর ঠিক করাসহ বড় করে গরুর খামার দিতে চান বাবুল।

প্রত্যন্ত এলাকায় এতো বড় গরু আগে দেখেনি স্থানীয়রা। প্রতিদিন গরু দুটি দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। গ্রামের হাট বাজার থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় এখন তাদের নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউ বলছেন ওজন কত? কেউবা জানতে চাইছেন দাম। আসছেন গরু ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু দাম মন মতো না হওয়ায় ছাড়ছেন না বাবুল। তিনি বিগবসের দাম হাকিয়েছেন ১০ লাখ টাকা, আর বসের দাম ৭ লাখ টাকা।

বাবুলের স্ত্রী বুলবুলি বেগম বলেন, গরু দুটি নিয়েই আমাদের সারাদিন কাটে। আমরা দুজনে সামাল দিতে পারি না। তাই আরো দুজন শ্রমিক সঙ্গে নিতে হয়।

বাবুল বলেন, ষাঁড় আমার বাড়ির গরু থেকেই হয়েছে। আমি ছোট থেকেই তাদের প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার খাইয়ে বড় করে তুলেছি। অভাবের সংসার তাই ধারদেনা করে হলেও গরু দুটির খাবার জোগান দিয়েছি। এই কোরবানির বাজারে গরু দুটি বিক্রি করে দিবো। অনেক ব্যবসায়ী আসছে তবে কাঙ্খিত দাম এখনো বলেনি। ভাল দাম পেলে গরু দুটি বিক্রি করে দিবো। গরু বিক্রি করে ঘরদোড় ঠিকঠাক করে বড় করে খামার দিতে চাই।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক দানেশ আলী বলেন, বাবুল নিজের সন্তানদের চেয়েও বেশি যত্ন করে গরু দুটি বড় করে তুলেছেন। এতো বড় গরু আমরা আগে আমাদের এলাকায় কখনো দেখিনি। আশা করি গরু দুটি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন তিনি।

স্থানীয় উদ্যোক্তা আব্দুল মজিদ বলেন, বাবুল ভাই কৃষির পাশাপাশি আমার তাঁত কারখানাতেই কাজ করেন। এখানে কাজ করে যা আয় হয় তার সবই প্রায় তিনি ওই গরুর পেছনে খরচ করেন। তার যত্নে ফ্রিজিশিয়ান গরু দুটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি বিশাল আকৃতির হয়েছে। ভাল দামে বিক্রি করতে পারলে দরিদ্র এই কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে।  

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –