• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

পঞ্চগড়ে আদালতের উদ্যোগে ৩ সন্তান পেল মা-বাবা 

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২২  

দীর্ঘ ১৭ বছরের সংসারজীবন। পারিবারিক সামান্য বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় ঝগড়া-বিবাদ। রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দেন স্বামী শাহানুর। স্ত্রীও কম কিসে? স্বামীর বিরুদ্ধে দেন যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা। ঘটনা গড়ায় আদালতে। দুজনে হাজির হলে আদলত শুনলেন তাদের কথা, সন্তানদের কথা।

অবশেষে গতকাল রোববার (২৪ এপ্রিল) পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক মতিউর রহমান শাহানুর ও আকতারার সম্মতিতে খাসকামরায় মসজিদের ইমাম ডেকে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক ১ হাজার টাকার দেনমোহরে পুনরায় বিয়ে দেন।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের বারপাটিয়া গ্রামে শাহানুর-আকতারার বাড়ি। দাম্পত্য জীবনে তাদের রয়েছে তিন সন্তান। দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে আকতারা বানু ফিরে যান বাবার বাড়িতে। ছেলেসন্তান রয়ে যায় বাবার সঙ্গে। সবারই শুরু হয় দুর্বিষহ জীবন।

আদালত, আইনজীবী ও ওই দম্পতি সূত্রে জানা গেছে, দাম্পত্য কলহের জেরে ১৭ বছরের সংসারজীবনে ছয় মাস আগে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে আকতারা বানু তার বাবার বাড়িতে ফিরে যান। ছেলেসন্তান রয়ে যায় তার বাবার সঙ্গে। এ ঘটনায় আকতারা বানু স্বামীর বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত সমন জারি করেন। গতকাল রোববার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন শাহানুর। তার ইচ্ছে ছিল আদালতেই দেনমোহরের ১ লাখ ১ হাজার টাকা পরিশোধ করবেন। কারাগারে গেলেও তার সঙ্গে ঘরসংসার করবেন না বলে জেদ ধরেন। কিন্তু আদালতের এজলাসে উঠলে ঘটে হৃদয়বিদারক ঘটনা। তিন সন্তানকে দেখে মা-বাবা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারকও তিন সন্তানের মুখে চেয়ে ওই দম্পতিকে কলহ ভুলে আবার সংসারজীবনে ফেরার অনুরোধ করেন। এ সময় মা ও বাবা চিন্তাভাবনা করেন। পরে তারা আবারও সংসারে ফিরতে রাজি হলে আদালত মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল খালেক তাদের বিয়ে দেন। পরে আপসনামা দাখিল করলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফেরেন শাহানুর-আকতারা দম্পতি।

এ বিষয়ে আকতারা বানু বলেন, আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। আদালতের বিচারকের এমন অনুরোধে আমরা আবারো ঘর করার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা আবারও একসঙ্গে সংসার শুরু করেছি। আমি বিচারকের প্রতি কৃতজ্ঞ।

শাহানুর ইসলাম বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী ১৭ বছর ধরে সংসার করে সুখে-শান্তিতে ছিলাম। পারিবারিক বিষয়ে একটু ঝগড়া-বিবাদ হলেই আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে চলে যেত। তাই আমি রাগে-ক্ষোভে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। তালাকের পর আমি খুব কষ্টে জীবন যাপন করেছি। তবে আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করলে আমি এতে আরও বেশি রেগে যাই। পরে রোববার সেই মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালতের বিচারক আমাকে তিন সন্তানের দিকে চেয়ে আপসের কথা বলেন। তখন আমি সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিই। আমি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, আমরাও চেষ্টা করেছিলাম ওই দম্পতির সংসার টিকে থাকুক। বিচারক আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, সামান্য বিষয় নিয়ে তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। বিচারকের সঙ্গে আমরাও তাদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। আদালতের মাধ্যমে একটি সংসার রক্ষা পেয়েছে। আমরা সবাই এতে খুশি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –