• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

‘আমার স্বপ্ন নিভে যাচ্ছে, আমি বাঁচতে চাই’

প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০২৩  

 
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে শিপেন চন্দ্র বর্মনের স্বপ্ন ছিল পরিবারের হাল ধরার। কিন্তু গত সাত বছরে সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। ২০১৫ সালে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে চলছে চিকিৎসা। দিনের পর দিন চিকিৎসার খরচ জোগাতে হাঁপিয়ে উঠেছে শিপনের মধ্যবিত্ত পরিবার। এখন অর্থাভাবে থমকে আছে উন্নত চিকিৎসা।

অসহায় এই পরিবারের পাশে শিপেনের বন্ধুরা সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করে এলেও এখন কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রয়োজন ৩৫-৪০ লাখ টাকা। এত টাকা না থাকায় আক্রান্ত শিপেনের করুণ দশা দেখে প্রতিদিন চোখের পানি ফেলছেন অসহায় মা-বাবা। কাঁদছেন এক বছর আগে শিপনের জীবনসঙ্গী হয়ে আসা নববধূ জুঁই রানিও। এখন বিত্তবানদের আর্থিক সহায়তায় শিপেন চন্দ্র বর্মনকে বাঁচানোর আকুতি তাদের।

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের লতিঝাড়ি গ্রামের হরিশ চন্দ্র বর্মনের দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে বড় শিপেন চন্দ্র বর্মন। শিপেন চন্দ্র বর্মন ২০০৮ সালে আটোয়ারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ২০১০ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিপেন চন্দ্র বর্মন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

পড়াশোনার পর পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন শিপেন চন্দ্র বর্মন। একই স্বপ্ন কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পড়ুয়া তার ছোট ভাই রঞ্জন চন্দ্র বর্মনেরও। কিন্তু বড় ভাই শিপেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে নিজের স্বপ্ন ভুলে এখন ভাইকে বাঁচাতে অন্যের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইছেন তিনিও।

এদিকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, গ্রামের মেঠোপথ ধরে ছুটে বেড়ানো শিপেন এখন নীরব। সদা হাস্যোজ্জ্বল শিপেনের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সারাক্ষণ চেয়ে থাকেন নববধূ আর মা-বাবার মুখের দিকে। তার দুটি কিডনি নষ্ট হওয়াতে অনেকগুলো গোছানো স্বপ্নও এখন ফ্যাকাশে হতে বসেছে। অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার। সবকিছু বুঝতে পারায় নির্বাক হয়ে মাসের পর মাস শুয়ে-বসে  দিন কাটাচ্ছেন শিপেন।

শিপেনের বাবা হরিশ চন্দ্র বর্মন দেড় বছর আগে ছোট্ট একটি সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। কিন্তু অফিসিয়াল জটিলতার কারণে এখনো পেনশনের টাকা তার হাতে ওঠেনি। ছেলেদের পড়াশোনা ও সংসার চালানো হরিশ চন্দ্র এখন শিপেনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সম্বলহীন। সংসারে যা ছিল, একটু একটু করে সবই ফুরিয়ে গেছে। তবু হাল ছাড়েননি। আছেন ছেলের পাশে।

হরিশ চন্দ্র বর্মন বলেন, ২০১৫ সালের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন প্রায়ই শিপেন অসুস্থ হতো। বেশ কয়েকবার জ্বর হয়। কখনো অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা শেষে শিপেনের কিডনিজনিত রোগ ধরা পড়ে। জানা যায়, দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। সেই থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে শিপেনের চিকিৎসা করা হয়েছে। এখনো রংপুরে তার চিকিৎসা চলছে।

তিনি আরও বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ছেলেকে ভারতের চেন্নাইয়ের গ্লোবাল হাসপাতালে নিয়েছিলাম। সেখানেও কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আমার তো সেই সামর্থ্য নেই। ছেলের বন্ধুরাসহ গ্রামবাসী বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে, তাদের সহায়তার টাকা দিয়ে চিকিৎসা করেছি। বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। যা সম্বল ছিল, ছেলের জন্য শেষ করেছি। এখন আমার যা অবস্থা তাতে দেশেই চিকিৎসা করাতে পারব কি না জানি না। সবার সহযোগিতা ছাড়া ছেলের উন্নত চিকিৎসা ও কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়।

দিনরাত অসুস্থ স্বামীর সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন জুঁই রানি। সংসার জীবন গোছানোর স্বপ্ন তার নেই। এখন চাওয়া শুধু স্বামীর সুস্থতা। অশ্রুসিক্ত চোখে জুঁই রানি বলেন, আমার স্বামীকে বাঁচানো সম্ভব, এজন্য একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এখন যেভাবে চিকিৎসা হচ্ছে তাতেও প্রতি মাসে ৬০-৬৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। গত দুই মাসে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন প্রতি সপ্তাহে দুই দিন করে ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে। একইসঙ্গে দুটি দামি ইঞ্জেকশনও দিতে হয়। শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শ, আমার স্বামীকে বাঁচাতে চাইলে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এজন্য কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরি। কিন্তু আমাদের যা ছিল, সবই শেষ। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া এখন আর উপায় নেই।

নিজের অসুস্থ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিপেন চন্দ্র বর্মন। কাঁদতে কাঁদতে জানান, কিডনি রোগে ২০১৫ সাল থেকে ভুগছেন। কখনো কখনো একদিন দু-দিন করে প্রায় মাসখানেক ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকতে হয়। গত সাত বছর ধরে চিকিৎসা চলছে। এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে প্রায় দেড় মাস রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শিপেন। সেখানে তাকে নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে বেকায়দায় পড়েছেন। বাইরে থেকে চিকিৎসার সব উপকরণ কিনে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।

শিপনের ছোট ভাই রঞ্জন চন্দ্র বর্মন  বলেন, কিডনি রোগীদের একবার ডায়ালাইসিস করতে তিন হাজার টাকার চিকিৎসা উপকরণ কিনতে হচ্ছে। স্বল্প আয়ের রোগীরা ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অর্থের অভাবে অনেক রোগীর ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। অনেকেরই শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। আমার ভাইও এক্ষেত্রে বাদ পড়েনি। আমরা সাধ্যমতো তার চিকিৎসার চেষ্টা করছি। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য আমাদের নেই।

বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছেড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে আছেন শিপেন চন্দ্র বর্মন। সেখান থেকে তাকে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়ালাইসিস করানো ছাড়াও ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে।

শিপেন চন্দ্র বলেন, আমরা দুই ভাই। পরিবারে বাবা ছাড়া উপার্জনক্ষম কেউ নেই। কিন্তু বাবা তো এখন অবসরে গেছেন। ছোট ভাইটা কলেজে পড়ে। আমি পরিবারে সবার বড়। আমাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন। গরিব হলেও স্বপ্ন দেখতাম, পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হব। দেশ ও দশের জন্য কিছু করবো। কিন্তু আজ আমার স্বপ্ন নিভে যাচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই।

৩০ বছর বয়সী শয্যাশায়ী শিপেন , আমি আপনাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। আমার বাঁচার খুব ইচ্ছে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই। একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা গেলে আমি বাঁচব, আমার সংসার ও পরিবার বাঁচবে। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে ৩৫-৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন, এই ব্যয়বহুল খরচ আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবান, দানশীলসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করছি। দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যদি আমাকে এক টাকা করে দেয়, আমার কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম মোবাশ্বের আলম বলেন, অসুস্থ শিপেনের দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে। পাশাপাশি তার থেরাপি চলছে। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, একইসঙ্গে কিডনি প্রতিস্থাপন করা গেলে সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

শিপেন চন্দ্র বর্মনের কিডনি প্রতিস্থাপনসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য পাঠাতে বিকাশ, নগদ অথবা রকেট করুন এই +০৮৮০১৩০৮১০৭০৫৪ নম্বরে। এছাড়া ব্যাংকে টাকা পাঠাতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, আটোয়ারী শাখা, পঞ্চগড়, হিসাবের নাম-হরিশ চন্দ্র বর্মন, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর-০২০০০১৪৭৭৯২৯৬। আরও বিস্তারিত জানতে শিপেনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন এই ০১৭৩৮৩৬৬৬০৪ নম্বরে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –