• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মহানবী (সা.) যে ৮ বিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২  

একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি জীবনীগ্রন্থ লেখা হয়েছে কার, এ–বিষয়ক কোনো জরিপ কখনো হয়েছে কি? হলে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর নাম ওপরেই থাকবে। গত দেড় হাজার বছরে দেশ–বর্ণ–ধর্মনির্বিশেষে অজস্র সাহিত্যিক, সমাজনেতা, শিক্ষাবিদ, সমরবিদ, গবেষক, রাষ্ট্রনায়ক, এমনকি তার বিরুদ্ধবাদীরাও তাকে নিয়ে বিপুল প্রশস্তি বর্ণনা করেছেন। তার প্রচারিত ধর্ম গ্রহণ না করেও মহামানবের স্বীকৃতি দিয়েছেন।

কথাবার্তা ও আলাপচারিতায় মানুষের ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে ওঠে। তার শিক্ষা ও শিষ্টাচার, রুচি ও ব্যক্তিবোধ, মন ও চিত্ত-মানসিকতা স্পষ্ট হয়। যুতসই শব্দচয়ন, বিশুদ্ধ উচ্চারণ, মিষ্টি ভঙ্গি ও বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা একজন মানুষকে অনন্য গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয় সবার মাঝে। তা শিখিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)।

উম্মতের জন্য কোনটা কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণকর—এ নিয়ে আমাদের বারবার সতর্ক করেছেন। নিজের উম্মতকে নিয়ে যেসব ব্যাপারে আশঙ্কা করেছেন, সেসব বিষয়ে আগে থেকেই আমাদের সাবধান করে গেছেন। আজ সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো—

গোপন শিরকের ভয়

গোপন শিরক বা শিরকে খপি। অর্থাৎ ইবাদত করবে লোক দেখানোর জন্য। মানুষ দান করবে, যাতে তার দানশীলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, আমাদের নিকট রাসুল (সা.) বের হলেন, আমরা তখন দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় অবহিত করব না, যা আমার মতে তোমাদের জন্য দাজ্জালের চেয়েও ভয়ংকর? বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, গোপন শিরক। মানুষ নামাজ পড়তে দাঁড়ায় আর অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুন্দরভাবে নামাজ পড়ে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২০৪)

সমকামিতার আশঙ্কা

সমকামিতা এমন পাপ যা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত এবং এর কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর আজাব নাজিল করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী উম্মতের ব্যাপারেও এই ভয়াবহ অপরাধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মতের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হলো লুত সম্প্রদায়ের কুকর্ম। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৪৫৭)

দুনিয়ার মোহ

দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা এই উম্মতকে গোমরাহ করে দেবে। এ ব্যাপারে তিনি আমাদের সতর্ক করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের নিয়ে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু এ আশঙ্কা করি যে তোমাদের ওপর দুনিয়া এমন প্রসারিত হয়ে পড়বে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৫৮)

অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বা

লাগামহীন ও অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বার ব্যবহার আমাদের জীবনে ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে আনে। প্রিয় নবী (সা.) আমাদের এই মুখের ব্যবহারে সতর্ক থাকতে বলেছেন। সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ আস-সাকাফি (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাকে এমন একটি কথা বলুন, যা আমি ধারণ করতে পারি। তিনি বলেন, তুমি বলো, আল্লাহই আমার রব। তারপর এতে অটল থাকো। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আবার বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য সর্বাধিক আশঙ্কাজনক বস্তু কোনটি? তিনি স্বীয় জিহ্বা ধরে বলেন, এই যে এটি। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১০)

পথভ্রষ্ট নেতা

একজন নেতা সমাজের অভিভাবক। তার ভালো ইচ্ছাগুলো সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, আর যদি এর ব্যতিক্রম হয় তাহলে তা ওই সমাজের জন্য অমঙ্গলজনক। এদের ভ্রষ্টতা ইসলাম ধ্বংসের কারণ হবে। এ জন্য প্রিয় নবী (সা.) পথভ্রষ্ট ও আদর্শচ্যুত নেতা থেকে সতর্ক করে গেছেন। সাওবান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ভয় করি। তিনি আরো বলেছেন, আমার উম্মতের একদল আল্লাহর হুকুম (কিয়ামত) আসার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সর্বদা বিজয়ী বেশে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের অপমানিত করতে চাইবে তারা তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২২২৯)

নারীদের নিয়ে শঙ্কা

রাসুল (সা.) উম্মতকে নারীদের সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। কারণ বনি ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম যে ফিতনা হয়েছিল তা নারীদের নিয়েই। নবী (সা.) থেকে বর্ণিত, অবশ্যই দুনিয়াটা মিষ্টি ফলের মতো আকর্ষণীয়। আল্লাহ তাআলা সেখানে তোমাদের প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ করেন, তোমরা কিভাবে কাজ করো? তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বনি ইসরাঈলের মধ্যে প্রথম ফিতনা নারীকেন্দ্রিক ছিল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮৪১)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি আমার (ইন্তেকালের) পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে বেশি কোনো ফিতনা রেখে যাইনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮৩৮)

বাকপটু মুনাফিক

নবী (সা.) উম্মতকে বাকপটু মুনাফিক হতে সতর্ক করে গেছেন। অনেক মানুষ এমন আছে যে এই বাকপটুতা দেখে তাদের অনুসরণ করেছে আর বিভ্রান্ত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, এই উম্মাতের জন্য যাকে আমি সবচেয়ে ভয়ংকর ও বিপজ্জনক মনে করি এবং সবচেয়ে ভয় করি, সে হচ্ছে অতিশয় বাকপটু মুনাফিক। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৩১০)

দাজ্জালের ফিতনা

কিয়ামতের আগে সবচেয়ে ভয়াবহ হবে দাজ্জালের ফিতনা। যে ফিতনা সম্পর্কে সব নবী তাঁদের উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের দাজ্জালের ফিতনার ব্যাপারে সাবধান করছি, যেমন প্রত্যেক নবী তার সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সাবধান করেছেন। এমনকি নুহ (আ.)-ও তার সম্প্রদায়কে এ থেকে সাবধান করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছি, যা কোনো নবী তার সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হলো এই যে, তোমরা জেনে রাখো, দাজ্জাল কানা হবে। আল্লাহ তাআলা অন্ধ নন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৪৬)

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –