• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

নয়নাভিরাম মিঠাপুকুর মসজিদ

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২২  

সবুজ প্রকৃতি। চারদিকে সারি সারি গাছ। সঙ্গে মিশে আছে মেঠোপথ। পাখির চোখে রঙ-তুলিতে আঁকা রুপসী বাংলা। পিচঢালা সড়কের পাশের আঁকাবাঁকা সরু মেঠোপথ ধরে হাঁটতেই চোখে পড়বে একটি মসজিদ।

এটি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় ২১২ বছর আগে নির্মিত মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনার এক অনন্য নির্দশন। রংপুর মহানগরী থেকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিঠাপুকুর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটারের কম দূরত্বে এশিয়ান হাইওয়ের পাশেই মসজিদটির অবস্থান।

উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদটি মিঠাপুকুর মসজিদ বা মিঠাপুকুর বড় মসজিদ নামে পরিচিত। ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় ৬৯৫টি মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে দর্শনার্থীদের কাছে বেশ সমাদৃত এই মসজিদ।

মসজিদের প্রবেশ পথে টাঙানো তথ্য থেকে জানা যায়, হিজরি ১২২৬ মোতাবেক ১২১৭ বঙ্গাব্দ এবং ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে জনৈক শেখ মোহাম্মদ মোয়াজ্জমের প্র-পুত্র শেখ মুহাম্মদ আসিনের বাবা শেখ মোহাম্মদ সাবের কর্তৃক এটি নির্মিত হয়। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি নির্মিত হয় মোঘল আমলের শেষ দিকে। সেখানে দীর্ঘ প্রায় ২৫ একর আয়তনের একটি জলাশয় আছে। এটি প্রাক মুসলিম আমলে তৈরি তাতে সন্দেহ নেই। এ জলাশয় বা দিঘির নামানুসারে স্থানের নামকরণ হয়েছে মিঠাপুকুর। মসজিদটিও জলাশয় সংলগ্ন।

মসজিদের চারপাশে রয়েছে সুরম্য গেটসহ অনেক পুরোনো বাউন্ডারি দেয়াল। দেয়ালের অভ্যন্তরে রয়েছে খোলা আঙিনা। মসজিদের চার কোনায় পিলারের ওপর রয়েছে চারটি মিনার। মিনারগুলো আট কোনাকারে নির্মিত। মিনারগুলো ছাদের কিছু ওপরে উঠে গম্বুজ আকৃতিতে শেষ হয়েছে।

মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে কারুকার্য খচিত তিনটি প্রবেশদ্বার। মসজিদের মাঝের প্রবেশদ্বারের দু’পাশের পিলারের ওপরও রয়েছে ছোট দুটি মিনার। সামনের অংশে পোড়া মাটির কারুকার্য মসজিদটিকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। মসজিদের ভেতরে সামনের দরজা বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব।

চারপাশের কৃষি জমি বেষ্টিত মসজিদটি অনন্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। মসজিদটির প্রবেশদ্বারেও রয়েছে কারুকাজের ছাপ। মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো কন্দকারে নির্মিত সুবিশাল তিনটি গম্বুজ। গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত মসজিদটির প্রথম প্রবেশদ্বার বাংলাদেশি স্থানীয় সংস্কৃতির আদলে তৈরি। মূল দরজা দিয়ে ঢুকে পাওয়া যাবে সুন্দর একটি উঠান বা বারান্দা। ফ্যাকাসে লালচে ইট রঙে গড়া মসজিদটি যে কারও ভালো লাগবে।

এখানে আসতে হলে প্রথমে বাস বা অটোরিকশা করে মিঠাপুকুর গড়েরমাথা নামক জায়গায় আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে পশ্চিম দিকে চলে গেছে এশিয়ান হাইওয়ে। বিরামপুর ও দিনাজপুর মহাসড়ক ধরে হেঁটে গেলে ৫ মিনিট আর রিকশায় গেলে ২ মিনিটেই যেতে পারবেন মিঠাপুকুর বড় মসজিদে। রাস্তা থেকেই বাম দিকে বা দক্ষিণ দিকে তাকালেই চোখে পড়বে মেঠোপথ বেয়ে সবুজের বুকে ভাসমান এই মসজিদটি।

প্রাচীন মসজিদটিতে এরই মধ্যে সংস্কারের কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক। তিনি বলেন, সরকারি অর্থায়নে মসজিদটির মূল নকশা, আকার ও বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে কিছু সংস্কার করা হয়েছে। এ মসজিদটি কারও মতে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে আবার কেউ কেউ বলেছে এরও আগে এটি নির্মিত হয়েছে।  

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকাভুক্ত এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি প্রাচীনকাল থেকে মিঠাপুকুরকে ইসলামী জনপদ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। আর এই ঐতিহাসিক মসজিদকে ঘিরে প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থান থেকে দর্শনার্থী ও পর্যটকের আগমন ঘটছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –